স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

কষ্টপুর

কষ্ট পুরের মেয়ে
কষ্ট করে ছুঁইলে যখন
অমার হৃদয়, কষ্টে গেছে ছেয়ে।

স্বর্ণ চাঁপা রৌদ্রছায়ায়
ফুটেছিলো অপন মায়ায়
যেইনা তুলে পরলে খোঁপায়
কষ্টে গেছে ছেয়ে।

সে ফুলটা একটা মেয়ে
কষ্ট পুরের মেয়ে \

বৃক্ষ


আমার আর এক যমজ ভাই হলে
সে হোতো বৃক্ষ,
আমার আর এক হৃদপিন্ড থাকলে
সে হোতো বৃক্ষ।
আমার পিতার ঔরসে
আর একটি শিশু জন্মালে
সে হোতো বৃক্ষ।
প্রাণ এবং অস্তিত্বের
আর এক শরীর-
সেতো বৃক্ষ।
প্রতিটি বৃক্ষ আমার প্রাণ
প্রতিটি পত্রক আমার নিশ্বাস /

বিশ্বাস

বিশ্বাস হারালে নারী
অবিশ্বাসের সমুদ্রে কে আর বাঁচাবে তোমায় !

যেজন ডুবে যেতে চায় অসম্ভবের বন্যায়,
শরীর জড়িয়ে নেয় কামনার নগ্ন শৈবালে,

তারে কি আর তুলে নিতে পারে
তাব্দীর বিশাল নূহের কিস্তি !

খাদ্যসার্বভৌমত্ব

খাদ্যসার্বভৌমত্ব
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য একদিকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে, রোগ শোক থেকে রক্ষা করে, অন্যদিকে খাদ্য আমাদের নিজস্ব জীবন যাপন এবং সংস্কৃতিরও ধারক ও বাহক। মানবজাতির আদি সভ্যতার সূতিকাগার হোলো কৃষি । মানুষ প্রথম সভ্যতার বীজ বপন করে শষ্য উৎপাদনের মাধ্যমে। সে তার নিজস্ব প্রয়োজনে নিজস্ব আঙ্গিকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য উৎপাদন শুরু করেছিলো। মানুষের সভ্যতার সাথে সাথে কৃষির শতস্ফুর্ত সভ্যতাও সমান্তরাল ভাবে এগিয়ে গেছে। এই কৃষি সভ্যতার সামান্য বত্যয় ঘটলে মানুষের সভ্যতারও বত্যয় ঘটে। কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্থ কিংবা অবজ্ঞা করে কোনো সভ্যতা টিকে থাকতে পারেনা । আমরা দেখতে পাই আদিকাল থেকে এই কৃষি উত্পাদনের সাথে মানুষের মূল্যবোধ ও একটি দর্শনও জড়িত রয়েছে । এটা হোলো সে শুধু তার নিজের জন্যই উত্পাদন করেনা সে তার জনগোষ্ঠীর জন্যও খাদ্য উৎপাদন করে। খাদ্য গ্রহন করে সে যেমন নিজে বেঁচে থাকে আবার অপরকেও বাঁচিয়ে রাখে। সুতরাং এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় ,খাদ্য উত্পাদনের সাথে মুনাফার কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে জড়িত রয়েছে এক গভীর মুল্যবোধের প্রশ্ন। এ মুল্যবোধই তাকে মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করে দেয়। মানুষ একই সাথে তার নিজের খাদ্য উত্পাদন করে এবং অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যও সে নিশ্চিত করে। খাদ্যের সার্বভৌমত্ব হোলো নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করা এবং সেই খাদ্য উৎপাদনের প্রকৃয়া নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা। এর জন্য তার পরিবেশের দিকেও তাকে নজর রাখতে হয়। তাই কৃষি উৎপাদন শুধু খাদ্য উত্পাদনই নয় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ এবং অন্যান্ন প্রাণী জগতের সাথে নিবীড় সম্পর্ক। এ সমস্ত কিছুর সাথে সম্পর্ক রেখেই খাদ্য উত্পাদন করে মানুষের সভ্যতা চলমান রয়েছে। খাদ্যে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে কৃষকের নিজ এলাকার পরিবেশ,সংস্কৃতি ও কৃষি পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন ও জনগনের খাদ্য পাবার অধিকার । এই অধিকারের মধ্যে নিরাপদ,পুষ্টি সম্মত এবং নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল খাদ্যের কথা আছে । খাদ্যে সার্বভৌমত্বের অধিকার একই সাথে জমি পানি বীজ এবং সকল প্রাকৃতিক সম্পদেরও অধিকার বুঝায়। কৃষিতে নারীর অবদান এবং সক্রিয় অংশগ্রহনের সম্পূর্ন স্বীকৃতিও এর সঙ্গে বুঝায়। কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেট পুঁজির ব্যবস্থাপনায় কৃষি একটি শিল্প কারখানায় পরিণত হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানীর মুনাফার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে কৃষি। এর ফলে এই অধিকার এখন খর্ব হতে বসেছে। যদিও খাদ্যে সার্বভৌমত্ব মৌলিক অধিকার হিসাবে বহু আন্তর্জাতিক সনদে স্বীকৃত কিন্তু তবুও বিশ্বের বহু দেশ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের পঞ্চাশ কোটি লোক যারা কৃষক ও সরাসরি উৎপাদক হিসাবে কাজ করছে তারা পুষ্টি হীনতার শিকার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে এই চিত্র খাদ্য ঘাটতির কারনে হচ্ছে না বরং কৃষক ও গরিব মানুষ সহ খাদ্য উৎপাদক গোষ্ঠীর জমি সম্পদে অধিকার নেই । ফাও মনে করে এর প্রধান কারন খাদ্য সরবরাহে ত্র“টি ও সময় সঠিক মত খাদ্য পাচ্ছেনা বলেই ঘটছে।২০০২সালে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (ফাও) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন +৫-এ বিশ্বের সরকার এবং রাষ্ট্র প্রধানরা ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরূদ্ধে একটি অঙ্গীকার ও প্রস্তাব গ্রহন করেছে । অনেকেই মনে করছেন তা বাস্তবে একটি অবাস্তব প্রস্তাব। ক্ষুধা ও অপুষ্টি বানিজ্য উদারিকরনের ফলেই ঘটছে। বিশ্ব ব্যংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আই এম এফ) এর বানিজ্য উদারিকরনের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচী এশিয়ার গরিব ঋনগ্রস্ত দেশগুলোকে কৃষি ক্ষেত্রে বানিজ্য নীতি ও উদারিকরনের আওতায় আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এরফলে কৃষক, আদিবাসী জনগোষ্ঠী,নারী ও শিশু সহ সাধারন মানুষ দিনের পর দিন মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত এ অবস্থার পরিবর্তন করা না হবে তত দিন পর্যন্ত ক্ষুধা দারিদ্র অপুষ্টি থাকবেই। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার খোলা বানিজ্যনীতি এবং গোলকায়নের নানান কৌশল তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রনহীন করে তুলছে। যারফলে কোটি কোটি ক্ষুদ্র কৃষক ভূমিহীন চাষী ক্ষেতমুজুর এবং আদিবাসী জনগন এখন জমি পানি এমনকি তাদের বেঁচে থাকার নূন্যতম সুয়োগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় ফলে খাদ্য উৎপাদনে মানুষের অধিকার মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে খাদ্য সার্বভৌমত্বের চরম হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কৃষকদের সংগঠনগুলো এই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তুলছে। দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে ভারত ও বাংলদেশ। কৃষিতে বিষের ব্যবহারের বিরুদ্ধে অন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলছে মালয়শিয়ার পেষ্টিসাইড একশান নেটওয়ার্ক (প্যন-এপি)। ২০০৪সালের ২৫-২৭ নভেম্বর ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করবার জন্য অন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে বাংলাদেশ ও ভারত সহ প্রশান্ত মহাদেশীয় অঞ্চল ছাড়াও পৃথিবীর ৩৭টি দেশের ২০০ প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করে। এই সম্মেলনের আয়োজনে ছিলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষনা )। এই সম্মেলনের গুরূত্ব ব্যখ্যা করে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার এবং এশিয়া প্যাসিফিক রিসার্স নেটওয়ার্ক -এর বোর্ড কনভেনর ইনু রেইকো। তিনদিন ব্যপী এই সম্মেলনে খাদ্যসার্বভৌমত্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন উবিনীগের চেয়ারম্যান ফরহাদ মজহার, মালয়েশিয়ার সরোজিনী রেঙ্গম, কানাডার প্যাট মুনি, ফিলিপাইনের টনি টুহান ও র‌্যাফেল মারিয়ানা, পাকিস্তানের শহীদ জিয়া, নিউজিল্যান্ডের জেইন কেলসি, ভারতের পি.ভি.সতীশ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ। এই সম্মেলনে বিভিন্ন চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ খাদ্যসার্বভৌমত্বের বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা দিতে চেষ্টা করেছেন।অধিক খাদ্য উৎপাদনের সস্তা বুলি আউড়িয়ে বহুজাতিক কোম্পানী গুলো কৃষিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। এর সহায়ক শক্তি হচ্ছে বিশ্ব ব্যংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যংক। কৃষিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খাদ্য বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিষাক্ত খাদ্য গ্রহন করে মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপর দিকে শহর গঞ্জ গ্রামে বেঙের ছাতার মত প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতাল গড়ে উঠছে। বিশ্বায়নের মাধ্যমে মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি ফায়দা লুটছে। তারা কৃষি কেমিক্যালস বীজ ও খাদ্য শিল্পের ব্যপারে কৌশল নির্ধারন করছে ও এক চেটিয়া ব্যবসায়িক প্রভাব বিস্তার করছে। এতে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর কৃষি সামগ্রী অবাধে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে খাদ্য উত্পাদনে গুরুত্ব হারাচ্ছে। তারা বিশেষ করে গরীব দেশে দেশে অবাঞ্ছিত ভাবে খাদ্য মওজুদ গড়ে তুলছে। কৃষি শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে এবং রপ্তানীমুখী শষ্য উৎপাদনের ফলে অধিকতর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। ফলশ্র“তিতে কৃষক শ্রমিক ভোক্তা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং আমাদের খাদ্য, জমি, বাতাস ও পরিবেশ বিষাক্ত হচ্ছে।মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি জেনেটিক ভাবে উদ্ভাবিত অনুজীব, বীজ ও খাদ্য বিপননের ফলে জনস্বাস্থ্য জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও জীবন ধারনের ব্যপারে নতুন হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে। এই প্রযুক্তি ভুল ও অনৈতিক বিপনন দ্বারা ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের উপর আধিপত্ত বিস্তার করবে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পেটেন্ট ‘ল’ বীজ সংরক্ষনের অন্তরায় যা জনগনের খাদ্য সার্বভৌমত্বের জন্য সমস্যা। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ধান আঞ্চলিক খাদ্য সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী। জমি হচ্ছে খাদ্য, জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতির উৎস। বিবেক বর্জিত বৃহদাকার জমির মালিক ও মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি সরকারের সাহায্যে বানিজ্য উদারনীতি রপ্তানী মূলক খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদনে বিকল্প জমি ব্যবহারের ফলে ক্ষুদ্র চাষিগন ও তাদের পরিবার বর্গ জমি হতে বিতাড়িত হচ্ছে। এভাবে জমি দখলও ত্বরান্বিত হচ্ছে। একে একে হারিয়ে যাচ্ছে খাদ্য স্বয়ংসম্পুর্ণতা, আদি শিক্ষা ব্যবস্থা, বীজ ও প্রাণ বৈচিত্র্য। জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। মৎসজীবীরা হারাচ্ছে তাদের জীবন ও জীবিকা। জল ও নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এক বিশাল জন গোষ্ঠী। মহিলারা অধিক হারে দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। অবাধে হচ্ছে সামরিকীকরন। অমানবিক ভাবে হচ্ছে মানব অভিবাসন। বাড়ছে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। ভূমি হীনের সংখ্যা আশংকা জনকভাবে বাড়ছে। এসবের জন্য সচেতন মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। এখন পৃথিবী ব্যাপী দাবী উঠছে খাদ্য সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তার জন্য। যে সব দাবী গুলো এখন খুবই সোচ্চার সে গুলো হলো-১.সঠিক ভূমি বন্টন নীতি যা ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র চাষি কৃষক পরিবারের ছেলে মেয়ে উভয়েই যারা জমিতে কাজ করে বা পূর্বে উৎখাত হয়েছে সকলকে কৃষি উত্পাদনে সাহায্য প্রদান সহ মহাদেশীয় কর্পোরেশনের প্রভাব মুক্ত রাখা অপরিহার্য। সঠিক ভূমি বন্টন নীতিই কেবল খাদ্য সার্বভৌমত্ব, জমি ও খাদ্য বিষমুক্ত এবং সামাজিক ন্যয় বিচারের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। ২.কৃত্রিম কীটনাশক যা স্বল্পমেয়াদি অথবা দীর্ঘমেয়াদি এন্ডোক্রাইন জনিত ক্ষতির কারন হতে পারে তার ব্যাবহার নিয়ন্ত্রন হৃাস বা পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।৩. কর্পোরেশন গুলিকে নিষ্কৃয় করা সহ কীটনাশক বিরোধী আন্দোলনকারীকে সরকার কতৃক হয়রানী ব›দ্ধ করা আবশ্যক। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতি পূরনের ব্যবস্থা করা দরকার ।৪.ভোক্তা এবং উৎপাদক উভয়ের পক্ষ হতেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (জি,এম) মাধ্যমে উদ্ভাবিত বীজ খাদ্য এবং কৃষিতে অনুজীবের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। অনতিবিলম্বে জি.এম. খাদ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।৫.কর্পোরেট ও সরকারের জবাবদিহিতা সহ এ্যগ্রো কেমিক্যাল এবং খাবারের উপর যে অন্যায় কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সকল প্রকার অন্যায়ের অবসান করতে হবে।এখন খাদ্যের এ বিষাক্ত আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পৃথিবীর মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। মানবজাতির আগামী সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখন জরুরী হয়ে পড়েছে খাদ্য সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। সবার আগে প্রয়োজন পৃথিবীকে বিষ মুক্ত করা।

বেদনা

এক নিকষ অন্ধকারে
সারা রাত আমার বুকে
মাথা গুঁজে রাখলে।
তোমার নাকের ঘ্রাণ

নোলকের খোঁচা
চুড়ির শব্দ একটি রাত নির্ঘুম করে রাখলো।
একটি সকালের জন্য সবাই ব্যকুল হোলো।
ভোর হতেই তুমি নিঃশব্দে

ফিসফিস করে বল্লে, যাই.......
আমার বুকে বিদ্ধ হোলো

একটি রাত্রি হারাবার তীব্র বেদনা।

লাশ

একদিন খুব ভোরে
তুমি জেগে উঠে দরজা খুলে দেখলে
তোমার আঙ্গিনায় পড়ে আছে
তোমারই রক্তাক্ত লাশ।

বাতাবী নেবুর গাছটার নীচে
স্থির নিশ্চল তোমার নির্জীব লাশ।
কয়টা কাক, কয়টা টুনটুনি লাশটা ঘিরে
ইতি উতি ডাক দিয়ে যায়।

পুলিশ, হাসপাতাল, মগর্, ময়নাতদন্ত
এই সব ঝুট ঝামেলা শেষে
চাপ চাপ রক্তের কফিনে মোড়া লাশ
তুমি ফের তোমার কাঁধে তুলে নিলে।

এই লাশ আর কর্র্পূরের গন্ধ মাখা দেশে
টুনটুনি আর কর্কশ কাকের দেশে
এই রক্তাক্ত কফিনের দেশে
এক দিন তোমাকে খুন হতেই হবে।

জহুরের ডাক

জহুর জহুর জহুর দেখালো পথ
রক্ত দিয়েই আসবে স্বাধীনতা,
জহুরের খুন বাঙ্গালীর ঘরে গেলো
মানবোনা আর জালেমের অধীনতা।

চারিদিকে দেখ আগুনের শিখা উঠে
বন্ধু আজ আর থেকোনাকো ঘরে বসে,
চেয়ে দেখ আজ শোষকের পরাজয়
শোশিত ধরেছে নিজের পাঁজর কসে।

কলমের কালি হবে নাকো কভু শেষ
লিখে যাই আমি আমার স্বদেশী ছবি,
মুক্ত আকাশে শকুনেরা উড়ে আজ
বাংলায় হায় কত কাল আর র’বি।

পোড়া ক্ষেতে আজ কৃষকের পঁচা হাড়
আবর্জনায় লেগেছে আগুন শিখা,
উন্ত ঐ কুকুরেরা হাঁকে পথে
চরদিকে আজ শোনিত রক্ত লিখা।

পেঁচকেরা আজ মরা ডালে ডালে বসে

নিশাচর ওরা ডাকদেয় গুরু গলায়,
বিপ্লবী ডাক এই বুঝি তারই সুর
শোশিত কারেও দেখিনা বট তলায়।

দু’চোখেতে আজ ঘৃনার অগ্নি শিখা
কিশোর মুঠিতে বারুদেরা খেলা করে,
শোষকের হায় ভয়ে বুক থরো থরো
সরু গলি পথে যৌবন খেলা করে।

বাংলা আমার সোনার বাংলা ’পরে
কি বাজ পড়েছে অত্যাচারির রোষে,
সবুজ ক্ষেতেতে শুধু উড়ে ধূধূ বালি
বন্ধু আজ আর থেকোনাকো ঘরে বসে।

সূর্যকে ধরি মোরা আজ শুধু বলি
আঁধারেতে ওরে শপথ নিতেই হবে,
মুক্ত বঙ্গে লাল সূর্যটা যেন উঠে
মোদের রক্ত শীতল হবেরে তবে \

চলে গেলেন প্রবীন সাংবাদিক কামাল উদ্দিন আহ্মেদ






















তকাল রাতে বৃষ্টি হয়নি। তার আগের দিনে ও রাতে অঝোরে বৃষ্টি ঝরেছিলো। আজ সকালটা কিছুটা ঝরঝরে। মেঘ ভাঙ্গা রোদে সকালটা রোদ-মেঘের লুকোচুরি নিয়ে শুরু হলো। আষাঢ়ের ১৯ তারিখ মোঙ্গলবারের সকালটা এরকমই ছিলো। ঠিক এরকম একদিন সকালে কামাল ভাই আমার বাসায় এসেছিলেন। কথা ছিলো আমিই যাব তাঁর কাছে একটা ছবি নিযে। নিঝুম দ্বীপের কেরফা বুড়ির ছবি। বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিনে নিঝুম দ্বীপ। সে দ্বীপের এক অসাধারন নারী প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কেওড়া গাছ ধরে কি ভাবে বেঁচে ছিলো, সে এক কাহিনী। কেরফা বুড়ি ছিলো তার প্রতীক।’৭০ এর ১২ই নভেম্বর, ’৯১ এর ২৯ এপ্রিল। এ দুই গোর্কিকে বুদ্ধি দিয়ে, সাহস দিয়ে দুর্যোগকে ঠেকিয়েছিলেন নিভৃত দ্বীপের কেরফা বুড়ি। ছবিটা আমার কাছে ছিলো। কামাল ভাই তাঁকে নিয়ে লিখেছেন। ছবি দরকার, আমার কাছে ছুটে এসেছেন। বললাম, বসেন। ভরা গলায় বল্লেন, ‘না, রিক্সা দাঁড় করিয়ে রেখেছি’। গেইটের বাইরে রিক্সা দাঁড়ানো। তিনি বসলেননা । দাঁড়িয়েই কথা বলে ছবি নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আমার দুই সন্তান রৌদ্র আর বৃষ্টি দৌঁড়ে এসে তাঁকে সালাম করলো। স্নেহে আদরে তিনি ওদের সাথে আরো নিবিড় হলেন। আমার বাড়ির সামনের বাগানের করবীর চিরল পাতার ছায়া নিঙড়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন। ঠিক এরকম একটি সকালে তিনি আবার আমার কাছে এলেন সংবাদ হয়ে। সাংবাদিক বিজন সেন সকালে টেলিফোনে সংবাদটি আমাকে দিলেন। বাইরে তখন মেঘ ভাঙ্গা রোদের মাতামাতি। আমার বাসার সামনে বকুল গাছে অনেক বকুল ফুল ধরেছে। পথের উপরই বকুল ফুল ঝরে পড়েছিলো। লম্বা পাঞ্জাবী, লৃুঙ্গী, গলায় সবুজ পাগড়ীর কাপড় ঝুলিয়ে ঝরা বকুলের বিছানো পথ মাড়িয়ে বকুল করবীর গন্ধ মেখে লম্বা সাদা দাড়ির কামাল ভাই আবার আমার বাড়ীর দরজায় এসে দাঁড়ালেন। এবার তিনি কিছু নিতে আসেননি। এক লহমায় স্মৃতির ঝুড়ি নিয়ে এলেন।আমাদের কৈশোরকাল তখনো কাটেনি। সেই ঊনসত্তর সনের কথা । আমরা কয় বন্ধু মেতে থাকতাম সংস্কৃতি লেখালেখি নিয়ে। নোয়াখালী মৌমাছি কঁচি-কাঁচার মেলার সাংগঠনিক আয়োজনে আমারা থাকতাম নিমগ্ন। সেই সময় থেকে তাঁর সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা । কেতাদুরস্ত কামাল ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী তাঁর। কথার আগে ও পরে শুদ্ধ ইংরেজী ব্যবহার । কখনো কখনো ইংরেজীতে অর্নগল কথা বলেন। মাথায় লেনিনের টুপির মত অবিকল টুপি। দারুন লাগতো। লোকমুখে তাঁর নাম হলো ইংলিশ কামাল। কেন? কারন নোয়াখালীতে কামাল নামে সমসাময়িক আরো আছেন। একই নামে গুলিয়ে যায়। তাই চেনার সুবিধায় এরকম নাম হলো। আরেক জন আছেন নোয়াখালীতে, একই নামে। তিনি বাংলা কামাল। তো এই কেতা দুর¯ত ইংলিশ কামাল কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। তাও আবার মফস্বল সাংবাদিকতা কিন্তু এ দিয়ে তো আর পেট চলবেনা। এর সাথে শুরু করলেন কনট্রাকটরী ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসার চেয়ে তাঁর মন ছিলো সাংবাদিকতার দিকে। দৈনিক বাংলাতেই তিনি সবসময় ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে তা ছিলো দৈনিক পাকিস্তান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যšত তিনি ছিলেন জনকন্ঠের সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার। ঊনসত্তর এর গণআন্দোলনে নোয়াখালীর খবরাখবর গুলো নিয়মিত তাঁর কাগজে স্থান পেতো। সত্তুরের ১২ই নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে র্গাকীতে যে প্রলয় সাধিত হয়েছিলো, তার সকল খবর তিনি অতি সন্তর্পনে যতেœর সাথে পত্রিকায় পাঠাতেন। সে সময় পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকত তাঁর তোলা ছবি, ফিচার, রিপোর্ট। তাঁর রিপোর্টের ষ্টাইল ধরণ দেখে আমরা তরুনরা উৎসাহিত হলাম সাংবাদিকতায়। এভাবে তিনি আমাদের অনেককেরই গুরু হয়ে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর ছিলো একান্ত সম্পৃক্ততা। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। কলম আর যুদ্ধের ক্ষেত্রে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকতায় তিনি যেভাবে নিবিষ্ট ছিলেন তা অনেকের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। বৃহত্তর নোয়াখালীর গ্রাম, গঞ্জ , দ্বীপ, চরাঞ্চল তিনি চষে বেড়িয়েছেন। যেখানেই সংবাদের গন্ধ পেয়েছেন একা একা ছুটে গেছেন। শোষিত বঞ্চিতদের পক্ষে তাঁর কলম অ¯েত্রর মত গর্জে উঠতো বারবার। ২০০৩-এর ডিসেম্বরে নোয়াখালীর দক্ষিনে চরাঞ্চলে বনদস্যুদের নির্মূলের নামে নৃশংসভাবে চল্লিশ জন কথিত বনদস্যুকে প্রশাসনের সামনেই পিটিয়ে মারা হয়েছিলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ছিলো এক ন্যক্কার জনক হত্যাকান্ড। চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তখন এ হত্যাকান্ডকে অনেকেই সায় দিয়েছিলেন। এমনকি অনেক সাংবাদিক মানবাধিকার সংগঠন এ বিষয়ে টু শব্দ করেনি। কামাল ভাইকে দেখেছি এ নিয়ে প্রচন্ড ক্ষোভে লেখালেখি করেছেন। তিনিই বলেছেন বিনা বিচারে মানুষ হত্যা অন্যায়, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাঁর এই প্রতিবাদী লেখা ও রির্পোটের জন্য তাঁর জীবনের উপর হুমকি পযর্ন্ত এসেছিলো। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। একাই লড়েছেন। ন্যায় নীতির পক্ষে কাউকেই তোয়াক্কা করেননি। স¤প্রতি পত্রিকায় সাহসি কিছু লেখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মান হানির মামলা হয়েছে। সে মামলা মাথায় নিয়েই তিনি মৃত্যু বরন করেন।বছর দশেক আগের কথা, চরাঞ্চলে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। পথে হঠাৎ দেখা হলে তিনি বল্লেন, ‘চল, তোমাকে নিয়ে চরে যাব, কাল সকালে, যেতে পারবে’? আমার সত্যিই জরুরী কাজ ছিলো। কিন্তু তাঁর লোভাতুর সঙ্গও মিস্ করতে চাইছিনা। বল্লাম ঠিক আছে, যাব’। তাঁর সঙ্গ মানেতো একসঙ্গে কাজ করা ও কাজ শেখা। তিনি কার কাছ থেকে যেন একটা হুন্ডা মটর সাইকেল যোগাড় করলেন। সকালেই আমরা দক্ষিনে ছুটলাম। আমি চালাতে চাইলাম কিন্তু তিনি হ্যান্ডেল ছাড়লেন না। সে বয়সেই দক্ষতায় চালাতে লাগলেন হুন্ডা। চরের ভাঙ্গাচোরা রাস্তা । এক অসহায় নারীর ভিটে দখল করতে চাইছে স্থানীয় এক জোতদার। তিনি আমাকে নিয়ে ছুটলেন সেই জায়গায়। পথে একটি পাওয়ার ট্রিলার কেরিয়ারের সঙ্গে মারাত্মক দুঘটনায় পড়লাম আমরা। ব্রেকবিহীন পাওয়ার ট্রিলারের নীচে মটর সাইকেল সহ আমরা প্রায় চাপা পড়ে যাচ্ছিলাম। সরু রাস্তা। কোন রকমে বেঁচে গেলাম। কিন্তু তাঁর একটি পা আটকে গেল গাড়ীর তপ্ত সাইল্যান্সারের সাথে। পায়ের অনেকটা জুড়ে পুড়ে গেলো। ব্যথা ও পেয়েছেন প্রচুর। তবু দেখলাম সবকিছু ঠিকঠাক। নরমাল। সেই স্বভাব সুলভ ইংরেজী, ‘ইট্্স্ নাথিং, বি ইজি’। তিনি আবার গাড়ী চালালেন। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার মটর সাইকেল চালিয়ে বিকেলে ফিরলাম আমরা শহরে। ছবি তোলা আর খুব মাছ ধরার শখ ছিলো তাঁর। তখন তিনি কেতা দুরস্ত ইংলিশ কামাল। মাইজদী বড় দীঘির পাড়ে বড়শি ফেলে বসে আছেন। আমার তখন ক্যামেরার নাড়াচাড়া। তাঁর চর্তুদিকে আমরা কয়জন ঘিরে আছি। নানান কথা নানান গল্প। মাছের প্রতীক্ষা। সূর্য ডুবে গেছে। প্রায় আঁধার। আমি তাঁর ছবি তুলতে গেছি। তিনি হেসে বললেন ছবি তো উঠবেনা। আমি বললাম, ‘উঠবে’। তিনি বললেন, ‘যদি উঠে, ‘এখন যে মাছটা ধরবো তা তোমার’। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফিল্ম। সেদিনই ফিল্ম ডেভেলপ করে পরদিন প্রিন্ট করা ছবি তাঁকে দেখালাম। তিনি হেসে পিঠ চাপড়ালেন। বলা বাহুল্য সেদিন তাঁর বড়শিতে কোনো মাছ ধরেনি।‘৯৮ এর বন্যায় নোয়াখালীর অনেক অঞ্চল বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ডুবে ছিলো। বিশেষ করে চাটখিল ও বেগমগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনী প্রধান মাহ্মুদুর রহমান বেলায়েত সহ কামাল ভাই এলাকা গুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। পানি কিছুটা নেমে গেলে চাটখিলের একটা গ্রামে কৃষকরা আবার ধান বুনতে শুরু করে। তাদের দুর্দশা, দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম, আবার ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যাশা নিয়ে আমরা রিপোর্ট করবো । তখন আমি দৈনিক মুক্তকন্ঠের জন্য রিপোর্ট করছি। কামাল ভাই’র সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি গ্রামে গ্রামে। যেখানেই সংবাদের গন্ধ পাচেছন, যাচ্ছেন। জল কাদায় নেমে ছবি তুলছেন। তাঁর এরকম একটি ছবি দূর থেকে জুম লেন্সে তখন তুলেছিলাম। কামাল ভাই জানেন না। প্রিন্টও করেছিলাম। ভেবেছিলাম কখনো ছবিটি তাঁর হাতে দিয়ে সারপ্রাইজ দেবো । তা আর হয়ে উঠেনি। আজ কামাল ভাই নিজেই সংবাদ হয়ে আমাকেই সারপ্রাইজ করে দিলেন।কামাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন আমাদের অনেকের গুরু। তাঁর কাছে আমাদের অনেকের হাতে খড়ি। কিন্তু জীবিত অবস্থায় আমরা তাঁকে সে সম্মাান টুকু দিতে পারিনি। তাঁর অন্তিম যাত্রায় নোয়াখালীর সাংবাদিকরা সবাই তাঁর মরদেহ প্রেস ক্লাবে নিয়ে এলেন। তাঁকে ফুল দিয়ে পুষ্পিত করলেন। তাঁর দেহকে সামনে রেখে এক মিনিট নীরব থাকলেন। নোয়াখালী প্রেসক্লাব নামক ভবনে শোকের কালো পতাকা উঠলো। যে প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই উদ্বোধন করেন, কামাল ভাই নিজ হাতে ইট বিছালেন। প্রেস ক্লাবকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে আসতে চাইলেন। যে প্রেসক্লাব তিনি হৃদয়ে পুষতেন, সেখানে অনেক কলো কষ্ট জমা হয়ে ছিলো। তাঁর সে হৃদয় থেকে কি আমরা কালো কষ্ট গুলো সরাতে পেরেছি !! এ অঙ্গনকে নিয়ে তাঁর আক্ষেপ ও দুঃখের শেষ ছিলনা। সে অনেক কথা। ক্ষোভের অনলে কষ্টের চিতা দাহ করে যন্ত্রণার ছাই ভস্ম উড়িয়ে লাভ নেই। মানুষের ভিতর মানুষের প্রতিনিয়ত রুপান্তর ঘটে। প্রতি ঘটনার পর মানুষ নিজের ভেতর নিজেই পুনঃজন্ম লাভ করে। কেতাদুর¯ত কামাল ভাইয়ের ভিতর এরকম রুপান্তর ঘটে গেলো । প্রথম জীবনের কেতাদুর¯ত কামাল ভাই আর শেষ বয়সের শ্বশ্র“মন্ডিত কামাল ভাই কি একই কামাল উদ্দিন আহম্মেদ!! তাঁর মাইজদী কোর্টের বাসায় যে ড্রইং রুমে বসে আমরা কথা বলতাম, সে ড্রইংরুমে সাদা কাপড়ে মোড়া নির্বাক কামাল ভাইকে দেখে কি বলা যাবে ইনি কোন কামাল উদ্দিন আহমেদ !!! কামাল ভাইয়ের বিদেহী আত্মা চির শান্তি লাভ করুক।

এই মেয়ে

এই মেয়ে
তুই ঠোঁট কাটা
তোর ঠোঁটের ’পরে
তিল ।

অন্তরে তোর
গোলাপ কাঁটা
চোখ জুড়ে ঝিল
মিল ।

ও মেয়ে
তোর চোখের কোনে
চোখের আমি
বালি।

মন জুড়ে তোর
উথাল পাথাল
রাঙ্গা ফুলের
ডালি।

আড় চোখে
বিষ তীর ছুঁড়ে
তোর চোখের কোণে
নীল।

এই মেয়ে
তুই আগল
ভাঙ্গার পাগল অনা
বিল।

প্রত্যাশা

আঁধার তুমি কোথায় লুকাবে মুখ
একটু পরেই ফুটবে চাঁদের আলো
পেঁচক বলে,‘আঁধারেই আছে সুখ
যেমন আছি তেমনইতো ছিলো ভালো’।
ওঁত পেতে থাকে সারাটা বিশ্ব জুড়ে
ভেজালেরা এসে মিশে যায় কালো দেহে,
কীটের দেবতা বাসা বাঁধে মাটি খুঁড়ে
সূর্য উঠবে আঁধারের মাথা খেয়ে।
একটু পরেই ঘুচবে কালো দুখ্ ,
আঁধার তুমি কোথায় লুকাবে মুখ!