স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

কষ্টটুকু আমায় দিও

<>



কষ্টটুকু আমাকে দিও
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

তোমার সকাল তোমারই থাক
শুধু সন্ধ্যাটুকু আমায় দিও,
দিনের আনন্দ আছেতো পড়ে
শুধু কষ্টটুকু আমাকে দিও।

আকাশে ঢেকে থাকে মেঘ
আনন্দে হবে বরিষন,
দু:খ জাগানিয়া মেঘ আসে যদি
সে দু:খটুকু আমাকে দিও।

উদাসী বাতাস যদি বয়ে যায়
উড়ায়ে চঞ্চল কুন্তল,
উচ্ছাসে প্রাণ করিও রঙ্গিন
শুধু বিরহটুকু আমারে দিও।

আবেগে যে প্রাণ হবে উন্মন
পুষ্প নিকুঞ্জ বনে,
ভালোবেসে তুমি রেখে দিও ফুল
শুধু কাঁটাটুকু আমাকে দিও।

আলো ঝলমল আনন্দ কোলাহল
প্রাণেতে রাঙ্গিয়ে নিও,
উচ্ছল দিন তুলে নিও তুমি
শুধু আঁধারটা আমাকে দিও।

বাদামের খোসা



বাদাম ভরা এল্যুমেনিয়ামের বড় ভান্ড। দু দিক দিয়ে গামছা বাঁধা। সে গামছা গলায় বেঁধে আট বছরের মহিন উদ্দিন বাদাম বিক্রি করে। বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার। নোয়াখালীর মাইজদি শহরে কোর্ট বিল্ডিং আদালত পাড়া, বড়মসজিদ,স্কুল এসব জায়গাতেই তার পসরা নিয়ে ঘুরা ঘুরি।

তৃণমূলের তথ্য এবং তথ্যের সরলিকরণ

তথ্যের অবাধ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমরা পুর্বের চেয়ে অনেক বেশী সোচ্চার। আধুনিক বিশ্বে মনে করা হয় তথ্যই শক্তি। যার মানে দাঁড়ায়, যার যত বেশী তথ্য ভান্ডার আছে সে ততবেশী শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান। এ ধারনা থেকে দ্রুততম সময়ে তথ্য পাওয়ার আকাংখা থেকে মানুষ নির্ভর করছে ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, গণমাধ্যম ইত্যাদির উপর। এই সকল যান্ত্রিক ও প্রকৃয়াজাত মাধ্যম গুলো তথ্যের দ্রুতলয়ের চলয়মানতা নিশ্চিত করে। উন্নত বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির সাথে দ্রুততার সাথে সংযুক্ত হচ্চেছ। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের এই বাংলাদেশে এখনো এর প্রসার তেমন ঘটেনি। আমাদের সনাতন গ্রামগুলোতে এখনো তথ্য প্রবাহের অবাধ যাতায়াত নেই। তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ নানান সনাতন মাধ্যমের উপর নির্ভর করে । সনাতন জ্ঞান লোকায়ত জ্ঞান ইত্যাদির উপর গ্রামীণ জনগন অনেকটাই নির্ভরশীল। তথ্যকে অন্য অর্থে বলা যায় জ্ঞান। তথ্যই জ্ঞান। কিন্তু সকল জ্ঞানই তথ্য নির্ভর নয়। গ্রামের মানুষ অনেক ক্ষেত্রে নানান কারনে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে উঠে। এই কুসংস্কার জ্ঞানও বটে। তবে তথ্য সর্বস্ব নয়। তাহলে বুঝা যায় জ্ঞান মানেই তথ্য নয়। সঠিক যাচাই করা খাঁটি তথ্যই জ্ঞান। তাহলে সঠিক তথ্য আমরা কিভাবে পাব? তার কষ্টিপাথরই বা কি? যেখানে প্রযুক্তি পৌঁছেনি। গণমাধ্যম যেখানে নেই, সেখানে মানুষ কিভাবে তথ্য পেয়ে থাকে। প্রান্তিক মানুষেরওতো প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন থাকে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ নানান তথ্যের উপর নির্ভর করে। শহরের মানুষ নানান সুযোগ সুবিধার মধ্যে বাস করে। তাদের তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ ও বেশী। কিন্তু গ্রামের মানুষ তা পায়না। তাদের অনেক সময় তথ্য বিভ্রান্তের মধ্যেও পড়তে হয়। এই বিভ্রান্তির ফলে মানুষের শুধু উন্নতিরই ব্যাঘাত ঘটে না, অনেক গ্রামীণ জীবনেও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। তথ্য গোপনীয়তা শুধু সরকারের মধ্যে বিরাজমান নয়। এ প্রবণতা সংবাদ মাধ্যম সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সমাজ গোষ্ঠী ব্যক্তির মধ্যেও দেখা যায়। অনেকে সংকীর্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য তথ্য গোপনীয়তা সহ তথ্য বিকৃতির ও আশ্রয় নেয়। রাষ্ট্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সাধারন ভাবে তথ্য আধিকারের কথা যখন আমরা বলি তখন এর আওতায় শুধু সেই সব তথ্যকেই বুঝি, যেগুলো সরকারের ক্ষমতা খর্ব হবার ভয়ে জনগনের কাছ থেকে গোপন রাখতে চায়। জনগনকে জানতে দিতে চায়না। এগুলো দুর্বল সরকারের ইঙ্গিত। দেখা যায় তথ্য আধিকারের সঙ্গে সরকারের একটি সম্পর্ক রয়েছে। পরাশক্তি গুলোও নানা ভাবে তথ্য গোপন ও বিকৃত করে থাকে। ইরাক আগ্রাসনের আগে বুশ সরকার নির্লজ্জ ভাবে ইরাক সংক্রান্ত অনেক তথ্য বিকৃত ও গোপন করে। যা এখন সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আবার গ্রামের অনেক চতুর মানুষ তথ্য গোপন ও বিকৃত করে তার কর্ম হাসিল করে। তথ্য বিভ্রাটের ফলে গ্রামের মানুষ প্রায়ই প্রতারিত হয়। বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়টি গ্রামীণ সমাজে অত্যান্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এর জন্য তাদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটকের শরনাপন্ন হতে হয়। গ্রামীন সমাজে অনেক প্রফেশনাল ঘটকও আছেন। শখের বসেও অনেকে ঘটকের কাজ করেন। এরা বিয়ের উকিল বলেও পরিচিত। এদের কাজ হলো কি করে বিয়ে ঘটানো যায়। এর জন্য তথ্যের হেরফের, গোপনীয়তা, অতিরঞ্জন সব কিছুই করে থাকেন। সম্প্রতি নোয়াখালীর জাহানাবাজ গ্রামের আবদুর রাজ্জাক নামের এক যুবক বিয়ে করে। ঘটকের মাধ্যমে তার সব তথ্য সরবরাহ করা হয়। আবদুর রাজ্জাকের আত্মীয় স্বজন কনের তথ্য সংগ্রহ করে। একদিন কনে দেখেও আসে। বিয়ের পর বরপক্ষ মহাক্ষ্যাপা । জানাগেলো যে মেয়েকে কনে পক্ষ দেখিয়েছে এই কনে সে মেয়ে নয়। ঘটক বলেছিলো কনে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেছিল, কিন্তু আদৌ মেয়েটি কোন পড়ালেখা করেনি। তথ্য বিভ্রাটে পড়ে বরপক্ষ মহা অসন্তু'ষ্ট। ফলে একটা সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ রকম ঘটনা গ্রামঞ্চলে অহরহই ঘটে থাকে। তথ্য আবশ্যই হতে হবে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ। সকল ধর্মেরই একটা সাধারণ বাণী হচ্চেছ, ‘সদা সত্য কথা বলিবে’। অর্থাৎ সদা সঠিক তথ্য পরিবেশন করিবে। মিথ্যা বলা মহা পাপ । মানে দাঁড়ায় মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আমরা সকল সময় সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে চাই না। আমাদের জন্ম নিবন্ধন, আয়ব্যয়, সম্পদ সর্বেক্ষেত্রেই আমরা তথ্যের লুকোচুরি করে ফেলি। গ্রামীন হাট বাজারগুলোতে কেনা বেচার সময় তথ্যের উপর নির্ভর করে বাজার সদাই করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইয়ের পন্থাও খুব মজার। গ্রামের গরুর হাটে গিয়ে দেখেছি যারা দুধের গাভী বা হালের বলদ কিনতে চান তারা বিক্রেতার কাছে নানান প্রশ্ন করে তথ্য জানতে চান। হালের বলদ কিনতে এরা জানতে চান । এটি কোন এলাকার গরু , আকার, রঙ, কয়টি দাঁত পড়েছে, গরুর গোবরের গন্ধ কেমন, রঙ কেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি। গাভী কিনতে তথ্য জানতে চান, মা গাভী কত কেজি দুধ দিতো, কয়বার বাচ্চা দিয়েছে, বয়স কেমন, গাভীর রঙ আকারতো আছেই । ক্রেতার পছন্দমত সব তথ্য মিলে গেলে তবে বেচা বিক্রি করার পালা। দেখা যায় আমাদের জীবন যাপন কি শহরের কি গ্রামে সর্বাঙ্গীন ভাবে তথ্যের উপরই নির্ভর করতে হয়। তথ্য যত স্বচ্ছ হবে আমাদের যাপিত জীবন ও তত নির্ঝঞ্ঝাট হবে। নিত্যদিনের ক্রিয়াকর্মে তথ্যের আদান প্রদানে সতর্ক থাকলে আমাদের সমষ্টিক পথ অনেক মসৃন হবে। একটি অন্যন্য জাতি হিসাবেও আমরা পরিগণিত হতে পারি। তাহলে এর জন্য আমাদের করনীয় কি ! ব্যক্তি জীবনেও এর জন্য আমাদের পরিশীলিত ও ঋদ্ধ হতে হবে। তথ্য হীনতা ও বিকারগ্রস্ত তথ্যের কারনে সমাজ অসঙ্গতি অজ্ঞানতার গ্রাসে নিমজ্জিত হয়। গ্রামীণ দুর্বল তথ্যপ্রবাহের কারনে শাসক শ্রেণী ও লুটেরা কিছু স্বার্থান্বেষীমহল বিকৃত ও ভুল তথ্য সরবরাহ করে দেয়। ‘বোকার ধান পোকায় খায়’ বলে ব্যপক ভাবে গ্রামীণ চাষীদের কাছে তথ্য প্রচার করে ক্ষতিকর কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে বহুজাতিক প্রাণ হত্যাকারী কীটনাশক কোম্পানীগুলো। ফলশ্রুতিতে আমাদের প্রাণবৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের তথ্য প্রচার করে জেনেটিক ফসল বা কৃত্রিমভাবে আবিস্কৃত স্বর্ণালী ধান আমাদের দেশে প্রচলন করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কৃষকদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব স্থানীয় প্রজাতির নানান ধরনের জাত। হারিয়ে যেতে বসছে তাদের ঘরে ঘরে বীজ সংরণের সনাতন জ্ঞান। তাই আমাদের এ দিকেও নজর রাখা দরকার কে কি কোন উদ্দেশ্যে তথ্য সরবরাহ করছে, তার দিকে যেমন খেয়াল রাখা দরকার, ভুল বিভ্রান্তিকর উদ্দেশ্য প্রণোদিত তিকর তথ্যের প্রতিও আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার ।

নোয়াখালীর কথিত বনদস্যু নিধন : ধামাচাপা পড়ে গেলো কি ?


নোয়াখালীর কথিত বনদস্যু নিধন : ধামাচাপা পড়ে গেলো কি ?
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ



ছবি: সাপ্তাহিক চলমান নোয়াখালী সৌজন্যে




বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী নানান ভাবে দেশে বিদেশে পরিচিত। সন্ত্রাসমুক্ত জেলা হিসাবেও এর পরিচিতি রয়েছে। তবুও শান্ত স্নিগ্ধ এই উপকূল কখনো কখনো রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠে। এই সবুজ প্রান্তরে মানবাধিকার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটলে একজন মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে আমরা বিচলিত না হয়ে পারিনা। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসাবে সে সব ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দেশের আনাচে কানাচে মাঝে মাঝে নানান অবাঞ্ছিত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে যায়। আমরা শুধু আমাদের চোখের সন্মুখের কিছু বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের কথাই বারবার ঘুরে ফিরে বলছি। এছাড়াও বিগত সময়ে আরো কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। সেগুলো আমাদের স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে নোয়াখালীর চরে ভূমিদস্যুতার অভিযোগে ৩৯ জন মানুষকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সে বছর ডিসেম্বরের ৬ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। তার পরের বছর ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ভাবে মহা-উৎসবের সাথে এ হত্যাকান্ডের বর্ষপূর্তি উৎযাপন করা হয়। এখনঅব্দি সে উৎসব মহা আনন্দের সাথে প্রতিবছর পালন করা হচ্ছে। অনৈতিক এত বড় হত্যাযজ্ঞকে উৎসব হিসাবে পালন করার নজির কেউ কখনো কোথাও দেখেনি। এ অনৈতিক নৃসংশ হত্যাকান্ডের পটভূমি সৃষ্টি হয়েছিলো উচ্চমহল প্রভাবশালী জোতদার ভূমিগ্রাসীদের সীমাহীন লালসার মোহ থেকে। এর প্রধান সূত্র জেলার বিপুল পরিমানের খাসজমি।বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর দক্ষিনে সমুদ্র থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এই নতুন চর নিয়ে ভূমিহীনদের সাথে প্রশাসন, স্থানীয় জোতদার, ভূমিগ্রাসী প্রভাবশালী মহলের সাথে সংঘাত নিত্যদিনের ঘটনায় পরিনত হয়েছে। এই ভূমিকে কেন্দ্র করে সেখানে গজিয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুদের চক্র। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহলই এই ভূমিদস্যুদের লালন পালন করে আসছে। তারাই আবার জনতাকে উসকে দিয়ে নির্বিচারে এদেরকে পিটিয়ে মেরেছে। সে সময়ের নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারী দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য জোতদার এবং যারা পিটিয়ে মেরেছে তারা বলেছিলেন, নিহতরা ছিলো সন্ত্রাসী, বনদস্যু, নরহত্যাকারী, ডাকাত লুটেরা। প্রশাসন বলেছিলো, বছরের পর বছর ধরে নোয়াখালীর চরের মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত অতীষ্ট হয়ে এ খুনের যজ্ঞ ঘটিয়েছে। শুধু খুনই নয়, অর্ধমৃতঅনেকের চোখে চূন ঢেলে, সরু লোহার শলা, কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেকের ঘর বাড়ি। প্রত্যদর্শীরা বলছে, এদের অনেকেই ছিলো ভূমিহীন কৃষক। এ ঘটনায় সমগ্র দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও শিহরিত হয়ে উঠেছিলো। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে পিটিয়ে খুন কেন! ঘটনাগুলো ঘটেছিলো দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সামনে। প্রশ্ন উঠেছে কারা সাধারণ জনতাকে নিজের হাতে আইন তুলে এই উন্মত্ততার জন্য উস্কে দিয়েছিলো। কারা এর ইন্ধনদাতা? আঁটঘাট বেঁধে হঠাৎ করে এঅভিযানের অন্য লক্ষও কি কিছু ছিলো? অনেকেই মনে করেন, ভূমিহীনদের অধিকারের খাসজমি দখল ও চিংড়ি ঘের স্থাপন করতে খাস জমি দখল করার জন্য ক্ষমতাসীনদের এটি ছিলো একটি

মানবতা বিরোধী হত্যাকান্ড। ছবি:সাপ্তাহিক চলমান নোয়াখালী সৌজন্যে

পরবর্তিতে বিগত জোট সরকার নোয়াখালীর উপকূলে ১১ হাযার ৮০০শ’ একর অত্যন্ত উর্বর ভূমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি মহাল ঘোষনা করে। কিন্তু সে যায়গায় দীর্ঘদিন থেকে ভূমিহীনরা বসতি স্থাপন করে আছে। ভূমিহীনরা মনে করে খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার একমাত্র ভূমিহীনদেরই রয়েছে। সে সময় ভূমিহীনদের ঊচ্ছেদ না করার জন্য হাইকোর্ট একটি নির্দেশনামা জারি করেছিলো। ঠিক সেই মূহূর্তে ঐ এলাকাতেই বনদস্যু নিধনের অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকের মনেই নানান প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দেয়। অবিশ্বাস্য এই লোমহর্ষক হত্যা যদি উদাহরণ হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে দেশের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তা কল্পনায় অসলেও শরীর শিহরিত হয়ে উঠে। তুচ্ছ কারনেও মানুষ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিবে। দেশ নেমে পড়বে এক অরাজক পরিস্থিতিতে। তাই কোনো কারনেই এ হত্যাযজ্ঞকে উৎসাহ বা সমর্থন করা যায়না। ইতিমধ্যে আমরা তার কিছু আলামতও দেখতে পেয়েছি। বাংলাভাই এবং তার জাগ্রত মুসলিম জনতার উত্থান আমরা প্রত্য্য করছি। নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে রাজপথে ছিঁচকে চোর ছিনতাইকারি পকেটমারকে পিটিয়ে মারা, জনসভায় প্রকশ্যে পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদিতো এ জাতি চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেছে।
সত্তর দশকে নোয়াখালীর দেিন মেঘনার মোহনা ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে জেগে উঠে বয়ার চর, নাঙ্গলীয়া, চরলক্ষী, চর উড়িয়া সহ বিশাল চরাঞ্চল। স্বাভাবিক কারনে ভূমিহীনরা সে খাস জমিতে বসতি স্থাপন করতে চায়। বনবিভাগ চর জাগার পর থেকে সৃজন করে নিবিড় বনাঞ্চল। এ সময় থেকে ভূমিহীনদের সাথে বন বিভাগের সংঘাত শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভূমিহীনরা সংঘবদ্ধ হয়ে বন উজাড় করে বসতি স্থাপন করতে থাকে। বয়ার চর থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায় বন কর্মীরা। বন বিভাগ সে সময় অভিযোগ করেছিলো, প্রশাসন তাদেরকে কোনো সহযোগীতা করেনি। এ ছাড়া সীমানা নির্ধারনের জটিলতা দেখা দেয়ায় সে এলাকায় প্রশাসন ছিলো নিষ্কৃয়। সে থেকে ধীরে ধীরে সমগ্র চরাঞ্চল মূলত: পাঁচ বনদস্যুর হাতে জিম্মি হয়ে যায়। এরা হোলো নব্যাচোরা, বশার মাঝি, সোলেমান কমান্ডার, সফি বাতাইন্যা ও জাহাঙ্গীর কমান্ডার। নানান মহলের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে এরা এক একজন দুর্ধর্ষ দস্যু হয়ে উঠে। দীর্ঘ দিন ধরে নারী নির্যাতন সহ এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও অভিযোগ রয়েছে সে সময় এদের ধরার জন্য প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো পদপে গ্রহন করা হয়নি। রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে এদের ছিলো দহরম মহরম।
এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, বনদস্যু নিধনের নামে মানুষ খুন করার অধিকার জনতাকে কে দিলো? কোন মহলের ইঙ্গিতে জনতা খুনের নেশায় মেতে উঠেছিলো? সবাই চায় গত কয়বছর ধরে চরাঞ্চলে যে দুর্ধর্ষ বাহিনী গুলো গজিয়ে উঠেছে ওদেরকে ধরে বিচার করা হোক। এরা মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধি। কিন্তু এই অপরাধের শাস্তি দেবে কে। এর জন্য আইন আদালত আছে। আইনের বিধান আছে। আইনের কোনো ফাঁকফোঁকর থাকলে তা সংশোধন করার আইন সভা জাতীয় সংসদ আছে। সংসদ সদস্যরা বসে আইন তৈরী করবেন। দেশের কাঠামো ঠিক করবেন। পরবর্তিতে আমরা দেখেছি তাদের লুটপাটের ইতিহাস। এই লুটপাট কিংবা গম ভাগাভাগির জন্য তাদেরকে জনগন সংসদ ভবনে পাঠায় নাই।
ইতিমধ্যে সচেতন মহল এই হত্যাকন্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গণহারে এ নরহত্যা সীমাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে এই মানুষগুলো কি পরিস্থিতির শিকার হোলো?
দেশের সাংবিধানিক আইনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। যতবড় নৃশংস খুনি অপরাধি হোক, মানুষ হিসাবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে, রাষ্ট্রের কাছে তার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন খুনি দন্ডযোগ্য আসামীকে বিনা বিচারে খুন করা দন্ডযোগ্য আর একটি খুনেরই নামান্তর। এর সাথে প্রত্য ও পরভাবে যারা জড়িত আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান অপরাধি। ‘ইন্টারন্যাশনাল কাভিনান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস্’(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়াবহধহঃ ড়হ ঈরারষ ধহফ চড়ষরঃরপধষ জরমযঃং ) এর আর্টিকেল-৬ এ উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে এবং সেই অধিকার আইনের দ্বারা সংরক্ষিত। অধিকিন্তু কেউ তার বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবেন না(সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা, ১৯৪৮-এর আর্টিকেল-৩)। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ১৯৮৯/৬৫ রেজুলেশন অনুসারে ‘বেআইনি ও অন্যায় হত্যা এবং আকষ্মিক হত্যার কার্যকরি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়’। এ বিষয়ে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার অর্টিকেল-৫ এ ব্যাক্তির মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অমর্যাদাকর ব্যবহার বা নির্যাতন করা যাবেনা’। উক্ত চুক্তির ধারা-২ এর ৩-(ক) উপধারায় বলা হয়েছে ‘যদি কোনো চুক্তিতে বর্নিত অধিকার এবং স্বাধিনতা সমূহ লঙ্ঘিত হয়, তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লঙ্ঘন সরকারী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দারা সংগঠিত হয়’। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কেউ চলমান আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
নোয়াখালীর চরাঞ্চলে যে গণহত্যার উৎসব হয়ে গেলো তা সুস্পষ্ট চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু আজও তার কোনো সুষ্ঠ তদন্ত হয়নি। সে হত্যাকান্ডেরও কোনো সুরাহা হয়নি। রাষ্ট্রিয় ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি অপরাধিদের বিচারের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের জনগণের এ ঘটনার সঠিক তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। সে এলাকায় ভূমিদস্যু নামে খ্যাত বশর মাঝি এখনো সক্রিয় রয়েছে। হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করা, চরাঞ্চলের সন্ত্রাস দমন এখন সরকারের একটি নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে বর্তায়। যে বিপুল সংখ্যক খাসজমি প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল জবর দখল করে আছে তা অতি দ্রুত উদ্ধার করে প্রকৃত ভুমিহীনদের মাঝে বিতরনের ব্যবস্থা করতে হবে। সচেতন মহল মনে করে, প্রকৃতির অপার কৃপায় নোয়াখালীর দক্ষিনাংশে যে বিপুল ভূসম্পদ দিন দিন জেগে উঠছে তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে নি:সন্দেহে দেশের অর্থনীতিতে সুফলতা বয়ে আনবে।

সন্ত্রাসী নিধনের নামে নরহত্যা, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন

নানান ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে আমরা সময় অতিবাহিত করছি। জাতীয় ও আন্ততর্জাতিক কোন্ ঘটনা কখন ঘটে সেই সন্ত্রস্ত্রতার মধ্যে আমাদের প্রতিনিয়ত থাকতে হচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটলে একজন মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে আমরা বিচলিত না হয়ে পারিনা। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসাবে সে সব ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। তা সে দেশের ভিতরেই হোক বা দেশের বাইরেই হোক। একজন ইরাকি কিংবা ফিলিস্তিনী তার বেদখল হওয়া ভূমির জন্য যে সংগ্রাম করে, একজন আদিবাসী কিংবা নোয়াখালীর চরের ভূমিহীনের ভূমির সংগ্রাম একই সূত্রে গাঁথা। দেশের ভিতরে র‌্যাব সহ রাষ্ট্রিয় মদদে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাথে সাথে আমাদের একই সঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এর সাথে যেন আন্তর্জাতিক চক্রান্ত জড়িয়ে না পড়ে। একজন মানবাধিকার কর্মীর একই সঙ্গে আগ্রাসী চক্রের কুটকৌশল গুলো বুঝার মতাও অর্জন করা দরকার। মানবাধিকারের জন্য তার সংগ্রামকে অন্য কেউ যেন সুচতুরভাবে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে তার থাকতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতে আরো বেশী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অযুহাত তুলে আমাদের দেশের ঘটনা গুলোকে ধামাচাপা দিলে আমরাই তির সম্মুখিন হব সবচেয়ে বেশী। আমরা শুধু র‌্যাব, অপারেশান ক্লিনহার্ট, বাংলা ভাইয়ের কথাই বারবার ঘুরে ফিরে বলছি। এছাড়াও আরো কিছু ঘটনা আমাদের স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে নোয়াখালীর চরে ভূমিদস্যুতার অভিযোগে ৩৯ জন মানুষকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ডিসেম্বরের ৬ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। তার পরের বছর ২০০৪ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ভাবে মহা-উৎসবের সাথে এ হত্যাকান্ডের বর্ষপূর্তি উৎযাপন করা হয়। এ অনৈতিক নৃসংশ হত্যাকান্ডের পটভূমি সৃষ্টি হয়েছে উচ্চমহল প্রভাবশালী জোতদার ভূমিগ্রাসীদের সীমাহীন লালসার মোহ থেকে।বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর দক্ষিনে সমুদ্র থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এই নতুন চর নিয়ে ভূমিহীনদের সাথে স্থানীয় জোতদার ভূমিগ্রাসী প্রশাসন প্রভাবশালী মহলের সাথে সংঘাত নিত্যদিনের ঘটনায় পরিনত হয়েছে। এই ভূমিকে কেন্দ্র করে সেখানে গজিয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুদের চক্র। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহলই এই ভূমিদস্যুদের লালন পালন করেছে। তারাই আবার জনতাকে উসকে দিয়ে নির্বিচারে এদেরকে পিটিয়ে মেরেছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারী দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য জোতদার এবং যারা পিটিয়ে মেরেছে তারা বলছেন নিহতরা ছিলো সন্ত্রাসী, বনদস্যু, নরহত্যাকারী, ডাকাত লুটেরা। প্রশাসন বলছে, বছরের পর বছর ধরে নোয়াখালীর চরের মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত অতীষ্ট হয়ে এ খুনের যজ্ঞ ঘটিয়েছে। শুধু খুনই নয়, অর্ধমৃত অনেকের চোখে চূন ঢেলে, সরু লোহার শলা,কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেকের ঘর বাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, এদের অনেকেই ছিলো ভূমিহীন কৃষক। এ ঘটনায় সমগ্র দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও শিহরিত হয়ে উঠেছিলো। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে পিটিয়ে খুন কেন! ঘটনাগুলো ঘটেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সামনে। প্রশ্ন উঠেছে কারা সাধারণ জনতাকে নিজের হাতে আইন তুলে এই উন্মত্ততার জন্য উস্কে দিয়েছিলো। কারা এর ইন্ধনদাতা? আঁটঘাট বেঁধে হঠাৎ করে এঅভিযানের অন্য লক্ষও কি কিছু আছে? অনেকেই মনে করেছেন, চিংড়ি ঘের স্থাপন করতে খাস জমি দখল করার জন্য ক্ষমতাসীনদের এটি মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড।বর্তমান সরকার নোয়াখালীর উপকূলে ১১ হাযার ৮০০শ’ একর অত্যন্ত উর্বর ভূমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি মহাল ঘোষনা করেছে। কিন্তু সে যায়গায় ইতিমধ্যেই ভূমিহীনরা বসতি স্থাপন করে আছে। তারা মনে করে খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার একমাত্র ভূমিহীনদেরই রয়েছে। (এরই মধ্যে অবশ্য ভূমিহীনদের ঊচ্ছেদ না করার জন্য হাইকোট একটি নির্দেশনামা জারি করেছে)। ঠিক এই মূহূর্তে ঐ এলাকাতেই বনদস্যু নিধনের অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকের মনেই নানান প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অবিশ্বাস্য এই লোমহর্ষক হত্যা যদি উদাহরণ হয়ে থাকে, তাহলে দেশে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তুচ্ছ কারনেও মানুষ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিবে। দেশে নেমে আসবে এক অরাজক পরিস্থিতিতে। তাই কোনো কারনেই এ হত্যাযজ্ঞকে উৎসাহ বা সমর্থন করা যায়না। ইতিমধ্যে আমরা তার কিছু আলামত দেখতে পাচ্ছি। বাংলাভাই এবং তার জাগ্রত মুসলিম জনতার উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে রাজপথে ছিঁচকে চোর ছিনতাইকারি পকেটমারকে জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
সত্তর দশকে নোয়াখালীর দক্ষিনে মেঘনার মোহনা ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে জেগে উঠে বয়ার চর, নাঙ্গলীয়া, চরলক্ষী, চর উড়িয়া সহ বিশাল চরাঞ্চল। স্বাভাবিক কারনে ভূমিহীনরা সে খাস জমিতে বসতি স্থাপন করতে চায়। বনবিভাগ চর জাগার পর থেকে সৃজন করে নিবিড় বনাঞ্চল। এ সময় থেকে ভূমিহীনদের সাথে বন বিভাগের সংঘাত শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভূমিহীনরা সংঘবদ্ধ হয়ে বন উজাড় করে বসতি স্থাপন করতে থাকে। বয়ার চর থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায় বন কর্মীরা। বন বিভাগ সে সময় অভিযোগ করেছিলো, প্রশাসন তাদেরকে কোনো সহযোগীতা করেনি। এ ছাড়া হাতিয়া ও নোয়াখালী সদরের সীমানা নির্ধারনের জটিলতা দেখা দেয়ায় সে এলাকায় প্রশাসন ছিলো নিস্কৃয়। সে থেকে ধীরে ধীরে সমগ্র চরাঞ্চল মূলত: পাঁচ বনদস্যুর হাতে জিম্মি হয়ে যায়। এরা হোলো নব্যাচোরা, বশার মাঝি, সোলেমান কমান্ডার, সফি বাতাইন্যা ও জাহাঙ্গীর কমান্ডার। নানান মহলের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে এরা এক একজন দুর্ধর্ষ দস্যু হয়ে উঠে। দীর্ঘ দিন ধরে নারী নির্যাতন সহ এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও অভিযোগ রয়েছে এদের ধরার জন্য প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে এদের ছিলো দহরম মহরম। এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, বনদস্যু নিধনের নামে মানুষ খুন করার অধিকার জনতাকে কে দিলো? কোন মহলের ইঙ্গিতে জনতা খুনের নেশায় মেতে উঠলো? সবাই চায় গত কয়বছর ধরে চরাঞ্চলে যে দুর্ধর্ষ বাহিনি গুলো গজিয়ে উঠেছে ওদেরকে ধরে বিচার করা হোক। এরা মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধি। কিন্তু এই অপরাধের শাস্তি দেবে কে। এর জন্য আইন আদালত আছে। আইনের বিধান আছে। আইনের কোনো ফাঁকফোঁকর থাকলে তা সংশোধন করার আইন সভা জাতীয় সংসদ আছে। সংসদ সদস্যরা বসে আইন তৈরী করবেন। দেশের কাঠামো ঠিক করবেন। গম ভাগাভাগির জন্য তাদেরকে জনগন সংসদ ভবনে পাঠায় নাই।
ইতিমধ্যে সচেতন মহল এই হত্যাকন্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গণহারে এ নরহত্যা সীমাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে এই মানুষগুলো কি পরিস্থিতির শিকার হোলো?
দেশের সাংবিধানিক আইনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। যতবড় নৃশংস খুনি অপরাধি হোক, মানুষ হিসাবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে, রাষ্ট্রের কাছে তার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন খুনি দন্ডযোগ্য আসামীকে বিনা বিচারে খুন করা দন্ডযোগ্য আর একটি খুনেরই নামান্তর। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে যারা জড়িত আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান অপরাধি। ‘ইন্টারন্যাশনাল কাভিনান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস্’(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়াবহধহঃ ড়হ ঈরারষ ধহফ চড়ষরঃরপধষ জরমযঃং ) এর আর্টিকেল-৬ এ উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে এবং সেই অধিকার আইনের দ্বারা সংরতি। অধিকিন্তু কেউ তার বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবেন না(সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা, ১৯৪৮-এর আর্টিকেল-৩)। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ১৯৮৯/৬৫ রেজুলেশন অনুসারে ‘বেআইনি ও অন্যায় হত্যা এবং আকষ্মিক হত্যার কার্যকরি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়’। এ বিষয়ে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার অর্টিকেল-৫ এ ব্যাক্তির মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অমর্যাদাকর ব্যবহার বা নির্যাতন করা যাবেনা’। উক্ত চুক্তির ধারা-২ এর ৩-(ক) উপধারায় বলা হয়েছে ‘যদি কোনো চুক্তিতে বর্নিত অধিকার এবং স্বাধিনতা সমূহ লঙ্ঘিত হয়, তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লঙ্ঘন সরকারী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দারা সংগঠিত হয়’। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কেউ চলমান আইনের ঊর্ধ্বে নয়।নোয়াখালীর চরাঞ্চলে যে গণহত্যার উৎসব হয়ে গেলো তা সুস্পষ্ট চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাষ্ট্রিয় ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি অপরাধিদের বিচারের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের জনগণের এ ঘটনার সঠিক তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।