স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

হুমকীর মুখে প্রাণী ও উদ্ভিত জগত

হুমকীর মুখে প্রাণী ও উদ্ভিত জগত

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশন সোসাইটি (আইইউসিএন) বাংলাদেশের প্রাণিজগতের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙকা প্রকাশ করছ,যে জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের বিরূপ কর্মকাণ্ড ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

আমজনতার তথ্য পাওয়ার আধিকার


আমজনতার তথ্য পাওয়ার আধিকার

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

থ্যের উপর নির্ভর করে প্রতিটি মানুষ তার জীবন যাপন শুরু করে। দিন শুরুর সাথে সাথে আপনা আপনি তার কাছে কিছু তথ্য হাজির হয়ে যায়। অবচেতন মনেই সে সেই তথ্যের উপর ভর করে প্রথম পদক্ষেপটি দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসির প্রস্তুতি

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসির প্রস্তুতি

মাহমুদুল হক ফয়েজ


উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় পৃথিবী। উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় ভোগ বিলাসিতাই এর অন্যতম কারণ। পরিবেশবাদিরা এ রকম অভিযোগের আঙ্গুল তুলে ধরছেন ধনী দেশ গুলোর প্রতি।

উপকূল জুড়ে সারি সারি বৃক্ষের লাশ

উপকূল জুড়ে সারি সারি বৃক্ষের লাশ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

দীর্ঘদিন ধরে সমগ্র উপকূল জুড়ে বৃক্ষ নিধনের উৎসব চলছে। নোয়াখালীর উপকূল, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এবং সম্প্রতি টেকনাফের উপকূলে বৃক্ষ নিধনের এক মহাযজ্ঞে বিলীন হয়ে গেছে শত সহস্র গাছ। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু বৃক্ষের দেহে প্রাণ আবিষ্কার করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্থ

মুক্তিযুদ্ধকালিন নোয়াখালীর কয়টি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস্, সারা দেশের মত নোয়াখালীতেও অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সব হত্যাযজ্ঞের অনেক কাহিনী আজ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবুও নোয়াখালী বাসীর অনেকের মনে সে সব স্মৃতিগুলো সকরুণ নিনাদে আজও গুমরে গুমরে কেঁদে উঠে।

নোয়াখালীর ভাষা

নোয়াখালীর ভাষা
মাহমুদুল হক ফয়েজ

নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ আর এর ভাষা নিয়ে দেশের অন্য অঞ্চলের লোকজনদের মধ্যে এক দারুন কৌতুহল রয়েছে। নানান মুখরোচক গল্পও প্রচলিত আছে এ জেলাকে নিয়ে। সারা দেশে তো বটেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নোয়াখালীর মানুষ। অনেকেই রসিকতা করে বলেন, চাঁদেও নাকি নোয়াখালীর মানুষ আছে।

মুক্তিযুদ্ধকালিন নোয়াখালীর কয়টি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

মুক্তিযুদ্ধকালিন নোয়াখালীর কয়টি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

মাn&gyদুল হক ফয়েজ

 

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস্, সারা দেশের মত নোয়াখালীতেও অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলোসে সব হত্যাযজ্ঞের অনেক কাহিনী আজ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছেতবুও নোয়াখালী বাসীর অনেকের মনে সে সব স্মৃতিগুলো সকরুণ নিনাদে আজও গুমরে গুমরে কেঁদে উঠে

মাইজদী যখন নোয়াখালী

মাইজদী যখন নোয়াখালী

মাহমুদুল হক ফয়েজ

নোয়াখালীর মত বাংলাদেশে আর এমন কোনো জেলা খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে জেলার আয়তন প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে

এই জাল আমগোরে রিজিক দেয়, বাঁচায়

ফিচার

এই জাল আমগোরে রিজিক দেয়, বাঁচায়

 মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

 

বাংলাদেশের উপকুল ঘেঁষে বাস করে লক্ষ লক্ষ মানুষ এদের আনেকেই বংশ পরম্পরায় জেলেজাল আর সাগরের জল এদের জীবনসঙ্গিউত্তাল ঢেউ ডিঙ্গিয়ে এরা পাড়ি দেয় গহীন সাগরেসাগরের অথই জলের ঢেউয়ে দোলা খায় তাদের ছোট্ট ছোট্ট মাছ ধরার ডিঙ্গিদোলা খায় ওদের ছেঁড়াখোঁড়া টোটকা জীবনপ্রকৃতি, সাগর আর আকাশ দেখে দেখে ওরা পথ চলেএই সাগর কখনো ওদের মায়াবী রোমাঞ্চে কাছে টানেআবার কখনো রুদ্র রুক্ষতায় ফুলে ফুঁসে ওঠেসাগরের এই রাগ, অভিমান আর শান্ত স্বভাব ওরা বুঝেশুনে চলেএদের প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেয়া জ্ঞান ভান্ডারে জমা হযে আছে অফুরন্ত সম্পদযুগ যুগ ধরে কুড়ানো এই অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ ভারী রামগতির চর আলেকজান্ডারের ইয়াছিন মাঝি মেঘনার পারেই তার বাড়িএকেবারে সাগরের মোহনায়সত্তরের কাছাকাছি বয়সমেঘনার করাল গ্রাসে কতবার ভেঙ্গে নিযেছে তার বসতভিটাতবু নদীর কুল ছাড়েনি কখনোউত্তাল সাগরের ঢেউ আর ইলিশের জাল এখনো বুক চেপে ধরে রেখেছেন তিনিরামগতির পশ্চিম মাথায় একবোরে নদীর কুল ঘেষে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে ইলিশের জাল বুন ছিলেনলম্বা রেখা ধরে ভেঙ্গে যাচ্ছে গ্রামবাড়ীর পর বাড়ী, কারো উঠান,কারো পুকুরঅনেক পুরানো গাছগাছড়া উপড়ে পড়ছে নদীতেইয়াছিন মাঝিদের এগুলো গায়ে সওয়া হয়ে গেছেনদীর ওপারে জেগে উঠেছে চর গজারিয়াপ্রকৃতির কি এক অপরুপ লীলা! নদীর এ পাড় ভাঙ্গে ও পাড় গড়ে...জালের উপর হাত রেখে ইয়াছিন মাঝি বলেন, ‘এই জাল আমগোরে রিজিক দেয়, আমগোরে বাঁচায়এক্কেবারে শৈশবেই বাবার হাত ধরে সাগরে নেমেছিলেন তিনিসাগরের নাড়িনক্ষত্র তাঁর চেনাসাগরের বান তুফান শুরু হওযার আগেই পশুপক্ষি,কীটপতঙ্গ আর আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দেখে তারা বানবাদলের আগাম ধারনা করে নেন

যখন পিঁপড়াগুলান সব গাছে উইঠা যায়, তখন আমরা কই - অবস্থা বালা নামাঝেমাঝে মাটি ফুইরা ছোট ছোট পজ্জা, উলানী উড়তে থাকেআমরা কই বান তুফান আইতে পারেতখন দরিয়ায় যাইতে আমরা সাবধানে যাইআল্লা - রসুলের নাম লইয়া আমরা সাগরে মাইধ্যে মাইধ্যে দক্ষিনের সাগর থেইখ্যা বড় বড় দমার (ঢেউ) ছুইটা আসেতখন এক এক লাহা (ঢেউ) আসে মাথা উচু কইরাযখন দেখি সাগর বেশী গরম হইয়া গেছে, তখন আমরা মাছের আশা ছাড়ি দেইতখন জান বাঁচাইবার চেষ্টা করিখোয়াজ খিজিররে ডাকিখোয়াজ খিজিরের কাছে মানত করি

কি মানত করেন ?

শিন্নি মানত করি মুরগী ছাগল মানত করি

অবস্থা খারাপ দেখলে কি করেন ?

তখন আমরা জাল গুলিরে সাগরে ফালাইয়া খুইলা দেইজালের ফুলুটগুলা জাল লইয়া ভাইস্যা থাকেসাগরের লাহায় আমাগো নাও গুলা উথাল পাতাল করেতখন আমরা নাওরে জাল দিয়া বেড়াইয়া লাহার নামনে গিয়া রাখিজালে আমাগরে বাঁচাই রাখে

নৌকা ডুবে নাই কোনো সময় ? বিপদ হয় নাই ?

হয় মাইধ্যে মাইধ্যে একবার আমাগো নাও ভাইঙ্গা গেছিলোচারিদিকে কিচ্ছু দেখা যাইতেছিল নাআমরা বারোজন পড়লাম বিপদেফুলুটগুলারে টাইন্যা জালের উপর পা রাইখ্যা বইসা রইছিলাম, ফুলুটগুলারে বগলের নিচে দিয়া ধইরা রাইখছি

কয়দিন ছিলেন এভাবে ?

তিন দিন তিনরাইত আছিলামকত মাছে ঠোকরাইছেবড় বড় মাছে ল্যাজ দিয়া বাড়ি মারছেপাঙ্গাস মাছে ঠোকরাইয়া গায়ের চামড়া উঠাইয়া ফেলছেকত আল্লাহরে ডাইকছি তখনকইছি - আল্লাহ আমাগোরে উদ্ধার কইরা পোলামাইয়া - বৌঝির কাছে নিয়া যাও

শেষে কিভাবে বাচলেন ?

তিন দিন তিন রাইত পরে একটা ট্রলার পাশ দিয়া যাইতে আমাগোরে দেইখ্যা তুইলা লইছেতখন এক্কেরে কাহিল হইয়া গেছিলাম খাওনের কথা মনে নাইপানির মাধ্য ছিলাম, খাইবার পানি পামু কইশরীলে তো এমনি পানি পাইছেসাগরের পানি তো লোনাবেশী খারাপ যখন লাইগছিলো, তখন জ্বিহবা বাইর কইরা একটু একটু পানির স্বাদ লইছি ইয়াছিন মাঝির তিন ছেলে, তিন মেয়েছেলেদের নাম নূরনবী, সোলায়মান, রুহুল আমীনতিন ছেলেই ইলিশের বোটে থাকেসবাইকে বিয়ে করিয়েছেন তিনিতারা সবাই আলাদা সংসার করছেছেলে -মেয়ে আছে ওদেরতিন মেয়ে আয়শা খাতুন,অহিদা খাতুন, নারগিস বেগমমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেনস্বামীর সংসারে সুখেই আছে তারাতাদের স্বামীরাও ট্রলারে মাছ ধরেইয়াছিন মাঝি থাকে মেঝো ছেলে নুর নবীর কাছেএক বিয়েই করেছেন তিনিস্ত্রী মরিয়মেরনেছা বুড়ি হযে গেছেন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন এখনইয়াছিন মাঝির সাথে ট্রলারে মাছ ধরে মোহাম্মদ হোসেন মাঝি, আবদুর রব মাঝি, মোজাম্মেল হকএদের সবার বয়স চল্লিশ পয়তাল্লিশের মধ্যেপঁচিশ - ত্রিশ বছর ধরে এরা সাগরে থাকছেএকে অপরের কাছ থেকে এরা শিখছে মাছ ধরার কৌশলকোন স্কুল কলেজের শিক্ষা ওরা পায়নিঅথচ এক বিশাল জ্ঞানভান্ডারের সমুদ্রে ডুবে আছেএদের শ্রম-ঘাম-মেধা-জ্ঞানে সাগরের গহীন জল থেকে উঠে আসে রুপালী ইলিশভাগ্যবানরা ভাজা ইলিশের গন্ধ শুঁকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেনসর্ষে বাটার ঝোলে ডুব দেয় অথই জলের ইলিশ ওরা বলেন - আমরা অশিক্ষিত মুরখ্য মানুষ্, সাগরে জাল ফেলিমাছ ধরি, বেচে খাইএই জাল আমাগোরে রিজিক দেয়, বাঁচায়

সাগরের ভাষা না বুঝলে সাগরে যাওন যায় না

জীবন যেমন

সাগরের ভাষা না বুঝলে সাগরে যাওন যায় না

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

 

সাগর পাড়ের মানুষজনসাগরের সঙ্গেই আষ্টেপৃষ্ঠে বেধেঁ রেখেছে তাদের জীবনসাগর ওদের মাঝেমাঝে ভাসিয়ে নিয়ে যায়কখনও মারে মরণ ছোবলতবুও সাগরেই ওদের জীবন, সাগরেই ওদের প্রাণমেঘনার মোহনায় রামগতির চর আলেকজান্ডারের জাহাঙ্গীর মাঝিঠিক নদীর পাড়েই আসলপাড়ায় বাড়ি তারনদী আর সমুদ্রের সঙ্গে যার আজীবন সখ্যতাইলিশের ট্রলার নিয়ে সঙ্গীসাথীহীন ছুটে যায় মাঝ দরিয়ায়সেই ছোট্র বয়স থেকে চাচা ফজল আহম্মদ মাঝির হাত ধরে সমুদ্র যাত্রাচাচাই তার ওস্তাদ এ নদীতে সাধারনত: আষাঢ় - শ্রাবন - ভাদ্র মাসেই ইলিশের মৌসুএ বছর তেমন ইলিশ নেই, কি এক অজানা কারনেশুরুতে জোয়ার এলেই ভাসাতে হবে ট্রলারযাত্রা হবে আজই নদীর বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে বহদ্দারহাটের পাশের জেলেপল্লীতেরামগতির এ অংশ ভাঙছে তীব্র বেগেকাদা-জলে আছড়েপড়া নদীর স্রোতে ছলা শব্দ ওঠেদূর আকাশে ভাদ্রের ছেড়াঁ ছেড়াঁ সাদা মেঘদক্ষিনে সমুদ্রের হাওয়া হু হু বয়ে যায়সাগরসঙ্গমের আকাঙ্খার এই উম্মাত্তাল মাদকতা বয়ে যায় বুঝি এই মাঝিদের দেহ - মনেজালের ভাজঁ খুলে খুলে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাহাঙ্গীর মাঝিএখন তার ভরা যৌবনদেরি তার যেন আর সয় নাসাগর যে তার প্রিয় সখার সাগর তারে হাতছানি দেয়

 ডর করে না ?

 ডর কইরবো ক্যান, সাগরে যাইতে হইলে সাগরের ভাষা বুঝন লাগেসাগরের ভাষা না বুঝলে সাগরে যাওন যায় না

জাহাঙ্গীর মাঝি হাসেএক রহস্যের বন্দরে রসিকতার নোঙর ফেলে যায়

পিরিতের মানুষ কি হগল সময় পিরিতের কথা কয় ? তারে দেইখ্যা বুইঝ্যা শুইন্যা পিরিত না করলে মরণসাগরও হে মুইখ্যা

কেমন করে সাগরের ভাষা বোঝেন ?

সাগরের ভাষা বুইঝতে আমরা পত্থমে চাঁদের হিসাব করিঅমবস্যা- পূর্নিমায় জোয়ারের হিসাব আমগো কাছে আছেতারপর করি মাসেরকোন মাসে সাগরের হাব- ভাব মন - -মেজাজ কেমন থাকে,বুইজতে হয়বারিষার বৃষ্টি হয় সাগরে পানি বাড়ে কিন্তুক গরম হয় না

কখন গরম হয় ?

চৈত্র - বৈশাখ মাসে আর শ্রাবনের শেষ থেইক্যা ভাদ্র আশ্বিন মাসে

তখন ক্যামন হয় ?

জাহাঙ্গীর মাঝি একটু যেন গম্ভর হয়ে উঠল উত্তর - পশ্চিম কোনে মুখ ফিরিয়ে হাতের ইশারায বলে,

ঐখানে কালো মেঘবাসা বাঁধেপরে সেইখান থেইক্যা দাঁত খিচাইযা ধাইযা আসেতখন যদি সাগরে জোয়ার থাকে, তয় অসুবিধা কম হয়জোয়ার তো তখন উত্তর দিকে যায়বাতাস আসে উত্তর দিক থেইক্যাআর ঝামিলা হয় ভাটার সময়তখন আমরা সাবধানে থাকিএইটা কালবৈশাখিমাইধ্যে মাইধ্যে দূর থেইক্যা আইসা দূরে মিলাইয়া যায়

ভাদ্র -আশ্বিন মাসে বান তুফানে কি করেন ?

এই সময়টা বেশী খারাপতখন আমরা সাগরের শরীলটা শুঁইকা শুঁইকা চলিঊনতাইল্লা গরম পড়লে আমরা বুঝি বিপদ আইতাছেভাদ্র মাসের তের তারিখে শীতে খুঁটা গাড়েহেইদিন শীতে খুটা গাড়ি কয় - আমি আইতে আছি, তোরা সব খেঁতা বাইর করহেই সময় মাইধ্যে মাইধ্যে রাইতে খুব কুয়াশা পড়েআবার দিনে পড়ে ঠান্ডা ভাঙা কড়া রইদরাইতে শীত,দিনে গরমআমরা সাবধানে চলিআবার মাইধ্যে মাইধ্যে দেখি কি - শীত শুরুর আগে উত্তর দিক থেইক্যা গন্ডায় গন্ডায় পাখি দক্ষিনে উড়াল দিতাছেহেই সময় হঠা করি যদি দেখি, পাখিগুলান আবার উত্তরে উইড়া আইতাছে,তখন আমরা চিন্তায় পড়ি ! কারন পাখিগুলাইন তো এখন আসার কথা নয়ওরা তো ফিরা যাইবো শীতের পরেতখন আমরা বুঝি, দক্ষিন দিক থেইক্যা কোন বিপদ আইতাছেসাগর ফুইলতাছেআমরা গাঙ্গের তুন কুলে চইলা আসিআবার আকাশের ভাব দেইখাও মন খোলাশা হইয়া যায়

 সে কি রকম?

এই ধরেন, আমাদের সাগরের মুখটা হইল দক্ষিণ পূর্বমুখীমাঝে মাঝে পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেইক্যা কালা মেঘ ধরেসেটা খুব বিপদমাইধ্যে মাইধ্যে এইটা কাইটাও যায়

সেটা কেমনে কাটে?

এই ধরেন, পূর্বে কালা মেঘ ধইরলোহেই সময় আবার পশ্চিমেও কালা মেঘ আর একটা বাসা বাঁইধলো

সেটা কি করে!

উইড়া পূর্ব দিকে আইসতে থাকেআবার পূবেরটাও পশ্চিমে আইসতে থাকেউপরে আসমানে তারা গুতাগুতি শুরু কইরা দেয়উপরে উপরে তখন দুইজনে রফা হইয়া যায়, নিষ্পত্তি হয়এই রকম দুই দিকে যখন কালা মেঘ ধরে, আমরা কই-কিছু হইত না, বিপদ নাই

সাগরে ছুটে যাওয়ার জন্য জাহাঙ্গীর মাঝি ব্যস্ত হয়ে ওঠেএক বিরহী রসিক যেমন তার প্রিয়তমার জন্য উতলা হয়ে ওঠে, জাহাঙ্গীরের ভেতরেও তেমন করে চষ্ণলতা ফুটে ওঠে জাহাঙ্গীর মাঝি বলে ওঠে-

মাইনসের শরীলের থুন যেমন ঘামের গন্ধ কয়, সাগরের শরীলের থুনও ঘামের গন্ধ কয়সেই ঘামের গন্ধ শুইক্যা আমরা চলি

শুধু জাহাঙ্গীর মাঝি নয়মেঘনার তীরের আঁতর আলী মাঝি, রহমত মাঝি, সোলায়মান মাঝি-এদের সবারই সাগরের সঙ্গে বেড়ে ওঠাসাগরই ওদের জীবন মরণওদের একজনের হাতে ছোট্ট এক ব্যান্ডের রেডিএকটানা বেজে যাচ্ছিল সেটি সাগর গরম হলে তো রেডিওতে বলে শুনেন না?

ওটা তো যন্ত্রের বাক্স, যন্ত্রে কথা কয়আমরা থাকি সাগরের কইলজার মইধ্যে, সাগরের নাড়ি ধইরা সাগরের ভাষা বুঝিসাগরের কইলজায় কান রাইখ্যা সাগরের গান শুনি