সন্ত্রাসী নিধনের নামে নরহত্যা, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন
নানান ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে আমরা সময় অতিবাহিত করছি। জাতীয় ও আন্ততর্জাতিক কোন্ ঘটনা কখন ঘটে সেই সন্ত্রস্ত্রতার মধ্যে আমাদের প্রতিনিয়ত থাকতে হচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটলে একজন মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে আমরা বিচলিত না হয়ে পারিনা। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসাবে সে সব ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। তা সে দেশের ভিতরেই হোক বা দেশের বাইরেই হোক। একজন ইরাকি কিংবা ফিলিস্তিনী তার বেদখল হওয়া ভূমির জন্য যে সংগ্রাম করে, একজন আদিবাসী কিংবা নোয়াখালীর চরের ভূমিহীনের ভূমির সংগ্রাম একই সূত্রে গাঁথা। দেশের ভিতরে র্যাব সহ রাষ্ট্রিয় মদদে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাথে সাথে আমাদের একই সঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এর সাথে যেন আন্তর্জাতিক চক্রান্ত জড়িয়ে না পড়ে। একজন মানবাধিকার কর্মীর একই সঙ্গে আগ্রাসী চক্রের কুটকৌশল গুলো বুঝার মতাও অর্জন করা দরকার। মানবাধিকারের জন্য তার সংগ্রামকে অন্য কেউ যেন সুচতুরভাবে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে তার থাকতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতে আরো বেশী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অযুহাত তুলে আমাদের দেশের ঘটনা গুলোকে ধামাচাপা দিলে আমরাই তির সম্মুখিন হব সবচেয়ে বেশী। আমরা শুধু র্যাব, অপারেশান ক্লিনহার্ট, বাংলা ভাইয়ের কথাই বারবার ঘুরে ফিরে বলছি। এছাড়াও আরো কিছু ঘটনা আমাদের স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে নোয়াখালীর চরে ভূমিদস্যুতার অভিযোগে ৩৯ জন মানুষকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ডিসেম্বরের ৬ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। তার পরের বছর ২০০৪ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ভাবে মহা-উৎসবের সাথে এ হত্যাকান্ডের বর্ষপূর্তি উৎযাপন করা হয়। এ অনৈতিক নৃসংশ হত্যাকান্ডের পটভূমি সৃষ্টি হয়েছে উচ্চমহল প্রভাবশালী জোতদার ভূমিগ্রাসীদের সীমাহীন লালসার মোহ থেকে।বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর দক্ষিনে সমুদ্র থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এই নতুন চর নিয়ে ভূমিহীনদের সাথে স্থানীয় জোতদার ভূমিগ্রাসী প্রশাসন প্রভাবশালী মহলের সাথে সংঘাত নিত্যদিনের ঘটনায় পরিনত হয়েছে। এই ভূমিকে কেন্দ্র করে সেখানে গজিয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুদের চক্র। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী মহলই এই ভূমিদস্যুদের লালন পালন করেছে। তারাই আবার জনতাকে উসকে দিয়ে নির্বিচারে এদেরকে পিটিয়ে মেরেছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারী দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য জোতদার এবং যারা পিটিয়ে মেরেছে তারা বলছেন নিহতরা ছিলো সন্ত্রাসী, বনদস্যু, নরহত্যাকারী, ডাকাত লুটেরা। প্রশাসন বলছে, বছরের পর বছর ধরে নোয়াখালীর চরের মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত অতীষ্ট হয়ে এ খুনের যজ্ঞ ঘটিয়েছে। শুধু খুনই নয়, অর্ধমৃত অনেকের চোখে চূন ঢেলে, সরু লোহার শলা,কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেকের ঘর বাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, এদের অনেকেই ছিলো ভূমিহীন কৃষক। এ ঘটনায় সমগ্র দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও শিহরিত হয়ে উঠেছিলো। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে পিটিয়ে খুন কেন! ঘটনাগুলো ঘটেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সামনে। প্রশ্ন উঠেছে কারা সাধারণ জনতাকে নিজের হাতে আইন তুলে এই উন্মত্ততার জন্য উস্কে দিয়েছিলো। কারা এর ইন্ধনদাতা? আঁটঘাট বেঁধে হঠাৎ করে এঅভিযানের অন্য লক্ষও কি কিছু আছে? অনেকেই মনে করেছেন, চিংড়ি ঘের স্থাপন করতে খাস জমি দখল করার জন্য ক্ষমতাসীনদের এটি মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড।বর্তমান সরকার নোয়াখালীর উপকূলে ১১ হাযার ৮০০শ’ একর অত্যন্ত উর্বর ভূমিতে পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি মহাল ঘোষনা করেছে। কিন্তু সে যায়গায় ইতিমধ্যেই ভূমিহীনরা বসতি স্থাপন করে আছে। তারা মনে করে খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার একমাত্র ভূমিহীনদেরই রয়েছে। (এরই মধ্যে অবশ্য ভূমিহীনদের ঊচ্ছেদ না করার জন্য হাইকোট একটি নির্দেশনামা জারি করেছে)। ঠিক এই মূহূর্তে ঐ এলাকাতেই বনদস্যু নিধনের অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকের মনেই নানান প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অবিশ্বাস্য এই লোমহর্ষক হত্যা যদি উদাহরণ হয়ে থাকে, তাহলে দেশে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তুচ্ছ কারনেও মানুষ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিবে। দেশে নেমে আসবে এক অরাজক পরিস্থিতিতে। তাই কোনো কারনেই এ হত্যাযজ্ঞকে উৎসাহ বা সমর্থন করা যায়না। ইতিমধ্যে আমরা তার কিছু আলামত দেখতে পাচ্ছি। বাংলাভাই এবং তার জাগ্রত মুসলিম জনতার উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে রাজপথে ছিঁচকে চোর ছিনতাইকারি পকেটমারকে জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
সত্তর দশকে নোয়াখালীর দক্ষিনে মেঘনার মোহনা ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে জেগে উঠে বয়ার চর, নাঙ্গলীয়া, চরলক্ষী, চর উড়িয়া সহ বিশাল চরাঞ্চল। স্বাভাবিক কারনে ভূমিহীনরা সে খাস জমিতে বসতি স্থাপন করতে চায়। বনবিভাগ চর জাগার পর থেকে সৃজন করে নিবিড় বনাঞ্চল। এ সময় থেকে ভূমিহীনদের সাথে বন বিভাগের সংঘাত শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভূমিহীনরা সংঘবদ্ধ হয়ে বন উজাড় করে বসতি স্থাপন করতে থাকে। বয়ার চর থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায় বন কর্মীরা। বন বিভাগ সে সময় অভিযোগ করেছিলো, প্রশাসন তাদেরকে কোনো সহযোগীতা করেনি। এ ছাড়া হাতিয়া ও নোয়াখালী সদরের সীমানা নির্ধারনের জটিলতা দেখা দেয়ায় সে এলাকায় প্রশাসন ছিলো নিস্কৃয়। সে থেকে ধীরে ধীরে সমগ্র চরাঞ্চল মূলত: পাঁচ বনদস্যুর হাতে জিম্মি হয়ে যায়। এরা হোলো নব্যাচোরা, বশার মাঝি, সোলেমান কমান্ডার, সফি বাতাইন্যা ও জাহাঙ্গীর কমান্ডার। নানান মহলের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে এরা এক একজন দুর্ধর্ষ দস্যু হয়ে উঠে। দীর্ঘ দিন ধরে নারী নির্যাতন সহ এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও অভিযোগ রয়েছে এদের ধরার জন্য প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে এদের ছিলো দহরম মহরম। এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, বনদস্যু নিধনের নামে মানুষ খুন করার অধিকার জনতাকে কে দিলো? কোন মহলের ইঙ্গিতে জনতা খুনের নেশায় মেতে উঠলো? সবাই চায় গত কয়বছর ধরে চরাঞ্চলে যে দুর্ধর্ষ বাহিনি গুলো গজিয়ে উঠেছে ওদেরকে ধরে বিচার করা হোক। এরা মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধি। কিন্তু এই অপরাধের শাস্তি দেবে কে। এর জন্য আইন আদালত আছে। আইনের বিধান আছে। আইনের কোনো ফাঁকফোঁকর থাকলে তা সংশোধন করার আইন সভা জাতীয় সংসদ আছে। সংসদ সদস্যরা বসে আইন তৈরী করবেন। দেশের কাঠামো ঠিক করবেন। গম ভাগাভাগির জন্য তাদেরকে জনগন সংসদ ভবনে পাঠায় নাই।
ইতিমধ্যে সচেতন মহল এই হত্যাকন্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গণহারে এ নরহত্যা সীমাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে এই মানুষগুলো কি পরিস্থিতির শিকার হোলো?
দেশের সাংবিধানিক আইনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। যতবড় নৃশংস খুনি অপরাধি হোক, মানুষ হিসাবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে, রাষ্ট্রের কাছে তার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন খুনি দন্ডযোগ্য আসামীকে বিনা বিচারে খুন করা দন্ডযোগ্য আর একটি খুনেরই নামান্তর। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে যারা জড়িত আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান অপরাধি। ‘ইন্টারন্যাশনাল কাভিনান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস্’(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়াবহধহঃ ড়হ ঈরারষ ধহফ চড়ষরঃরপধষ জরমযঃং ) এর আর্টিকেল-৬ এ উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে এবং সেই অধিকার আইনের দ্বারা সংরতি। অধিকিন্তু কেউ তার বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবেন না(সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা, ১৯৪৮-এর আর্টিকেল-৩)। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ১৯৮৯/৬৫ রেজুলেশন অনুসারে ‘বেআইনি ও অন্যায় হত্যা এবং আকষ্মিক হত্যার কার্যকরি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়’। এ বিষয়ে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার অর্টিকেল-৫ এ ব্যাক্তির মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অমর্যাদাকর ব্যবহার বা নির্যাতন করা যাবেনা’। উক্ত চুক্তির ধারা-২ এর ৩-(ক) উপধারায় বলা হয়েছে ‘যদি কোনো চুক্তিতে বর্নিত অধিকার এবং স্বাধিনতা সমূহ লঙ্ঘিত হয়, তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লঙ্ঘন সরকারী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দারা সংগঠিত হয়’। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কেউ চলমান আইনের ঊর্ধ্বে নয়।নোয়াখালীর চরাঞ্চলে যে গণহত্যার উৎসব হয়ে গেলো তা সুস্পষ্ট চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাষ্ট্রিয় ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি অপরাধিদের বিচারের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের জনগণের এ ঘটনার সঠিক তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।
সত্তর দশকে নোয়াখালীর দক্ষিনে মেঘনার মোহনা ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে জেগে উঠে বয়ার চর, নাঙ্গলীয়া, চরলক্ষী, চর উড়িয়া সহ বিশাল চরাঞ্চল। স্বাভাবিক কারনে ভূমিহীনরা সে খাস জমিতে বসতি স্থাপন করতে চায়। বনবিভাগ চর জাগার পর থেকে সৃজন করে নিবিড় বনাঞ্চল। এ সময় থেকে ভূমিহীনদের সাথে বন বিভাগের সংঘাত শুরু হয়। এক পর্যায়ে ভূমিহীনরা সংঘবদ্ধ হয়ে বন উজাড় করে বসতি স্থাপন করতে থাকে। বয়ার চর থেকে উচ্ছেদ হয়ে যায় বন কর্মীরা। বন বিভাগ সে সময় অভিযোগ করেছিলো, প্রশাসন তাদেরকে কোনো সহযোগীতা করেনি। এ ছাড়া হাতিয়া ও নোয়াখালী সদরের সীমানা নির্ধারনের জটিলতা দেখা দেয়ায় সে এলাকায় প্রশাসন ছিলো নিস্কৃয়। সে থেকে ধীরে ধীরে সমগ্র চরাঞ্চল মূলত: পাঁচ বনদস্যুর হাতে জিম্মি হয়ে যায়। এরা হোলো নব্যাচোরা, বশার মাঝি, সোলেমান কমান্ডার, সফি বাতাইন্যা ও জাহাঙ্গীর কমান্ডার। নানান মহলের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে এরা এক একজন দুর্ধর্ষ দস্যু হয়ে উঠে। দীর্ঘ দিন ধরে নারী নির্যাতন সহ এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও অভিযোগ রয়েছে এদের ধরার জন্য প্রশাসন থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে এদের ছিলো দহরম মহরম। এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, বনদস্যু নিধনের নামে মানুষ খুন করার অধিকার জনতাকে কে দিলো? কোন মহলের ইঙ্গিতে জনতা খুনের নেশায় মেতে উঠলো? সবাই চায় গত কয়বছর ধরে চরাঞ্চলে যে দুর্ধর্ষ বাহিনি গুলো গজিয়ে উঠেছে ওদেরকে ধরে বিচার করা হোক। এরা মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধি। কিন্তু এই অপরাধের শাস্তি দেবে কে। এর জন্য আইন আদালত আছে। আইনের বিধান আছে। আইনের কোনো ফাঁকফোঁকর থাকলে তা সংশোধন করার আইন সভা জাতীয় সংসদ আছে। সংসদ সদস্যরা বসে আইন তৈরী করবেন। দেশের কাঠামো ঠিক করবেন। গম ভাগাভাগির জন্য তাদেরকে জনগন সংসদ ভবনে পাঠায় নাই।
ইতিমধ্যে সচেতন মহল এই হত্যাকন্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গণহারে এ নরহত্যা সীমাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তাহলে এই মানুষগুলো কি পরিস্থিতির শিকার হোলো?
দেশের সাংবিধানিক আইনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। যতবড় নৃশংস খুনি অপরাধি হোক, মানুষ হিসাবে, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে, রাষ্ট্রের কাছে তার বিচার চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন খুনি দন্ডযোগ্য আসামীকে বিনা বিচারে খুন করা দন্ডযোগ্য আর একটি খুনেরই নামান্তর। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে যারা জড়িত আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান অপরাধি। ‘ইন্টারন্যাশনাল কাভিনান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস্’(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়াবহধহঃ ড়হ ঈরারষ ধহফ চড়ষরঃরপধষ জরমযঃং ) এর আর্টিকেল-৬ এ উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার আছে এবং সেই অধিকার আইনের দ্বারা সংরতি। অধিকিন্তু কেউ তার বেঁচে থাকার অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবেন না(সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা, ১৯৪৮-এর আর্টিকেল-৩)। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ১৯৮৯/৬৫ রেজুলেশন অনুসারে ‘বেআইনি ও অন্যায় হত্যা এবং আকষ্মিক হত্যার কার্যকরি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সরকারের দায় দায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়’। এ বিষয়ে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার অর্টিকেল-৫ এ ব্যাক্তির মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো মানুষের প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অমর্যাদাকর ব্যবহার বা নির্যাতন করা যাবেনা’। উক্ত চুক্তির ধারা-২ এর ৩-(ক) উপধারায় বলা হয়েছে ‘যদি কোনো চুক্তিতে বর্নিত অধিকার এবং স্বাধিনতা সমূহ লঙ্ঘিত হয়, তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লঙ্ঘন সরকারী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দারা সংগঠিত হয়’। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অবশ্যই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কেউ চলমান আইনের ঊর্ধ্বে নয়।নোয়াখালীর চরাঞ্চলে যে গণহত্যার উৎসব হয়ে গেলো তা সুস্পষ্ট চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাষ্ট্রিয় ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি অপরাধিদের বিচারের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের জনগণের এ ঘটনার সঠিক তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।