স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

মুষ্টিচাল


মুষ্টিচাল বাংলার গ্রামীণ জনপদের এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সংস্কৃতি। যুগযুগ ধরে গ্রামীণ নারীরা প্রতিদিনের রান্নার চাল থেকে একমুঠো চাল তুলে আলাদা হাঁড়িতে জমাকরে রাখে। পরে কখনো অভাব পড়লে অথবা প্রয়োজন পড়লে প্রতিদিনের এই জমানো চাল দিয়ে সে সংকট কাটিয়ে নেয়। প্রতিদিন এভাবে চাল তুলে রাখলে দৈনন্দিন রান্নার তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। অবস্থাপন্ন পরিবারের গৃহিনীরা আবার সঞ্চয় করার লক্ষ্যেও মুষ্টিচাল তুলে রাখেন। তারপর সঞ্চিত চাল বিক্রি করে সংসারের নানান প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করেন। নারীদের উপরই ন্যস্ত থাকে পুরো সংসার। সংসারের পুরো ব্যবস্থাপনাও থাকে তাদের হাতে। পুরুষরা বহির্মুখী। প্রায়ই ঘরের খবর তাদের জানা থাকেনা। মাঝেমধ্যে সংসারে চলে টানাপোড়েন। কখনো রান্নার চালও থাকেনা ঘরে। সংসারে দুর্ভোগ পোহাতে হয় গৃহিনীদেরই। সেই দুর্ভোগ কাটানোর জন্য সতর্ক গৃহিনীরা এই ব্যবস্থাকে সুনিপুন ভাবে কাজে লাগিয়ে থাকে। বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মুষ্টিচাল তুলে রাখা একটি সনাতন ঐতিহ্যও বটে।মুষ্টিচালের সনাতন এই ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নোয়াখালীর একলাশ পুর ইউনিয়নের দালানবাড়ি এলাকার একদল নারী প্রতিদিনের রান্না থেকে একমুঠো করে চাল সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে সচেষ্ট হচ্ছেন। এলাকার ২৮জন নারী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে গড়ে তুলেছেন ‘মুষ্টিচাল মহিলা সমিতি’। একাজে সবাইকে উত্সাহ যুগিয়েছেন সে এলাকার একজন স্কুল শিক্ষিকা শাহানা কবির। তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে ২০০০ সালে প্রথমে তাঁর বাড়িতে এ কাজ শুরু করেন। তাঁদের এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের অনেক যায়গায় নারীরা সংগঠিত হয়ে এ ধরনের আরো উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।বাংলার গ্রামীণ নারীদের তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য দিয়ে সঙ্গবদ্ধ করে কোনো মহ॥ত্ কাজ করার জন্য মুষ্টিচাল ঐক্য ও শক্তির রূপক হিসাবে কাজ করতে পারে।