স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

ক্ষুধার্ত

আমার প্রতিবেশী বড়বাবুর
পোষা কুকুর ক্ষিধায় কুঁকড়ে উঠে ।
বড়বাবু বিচলিত হয়
মাংসের টুকরো নিয়ে বড়বাবু ছুটে যান,
ভাতের থালা নিয়ে বাবুগিন্নি ছুটে যান,
বাড়ি ভরা মানুষ হা হা করে উঠে
কুকুরটা ক্ষুধায় কুকরে কুকরে উঠে ।

রাস্তার উপর একটা জীব
ক্ষিধায় কুকড়ে কুকড়ে উঠে
জীবটা আবিকল মানুষের মত
মুখটা আবিকল মানুষের মত
ক্ষিধায় ন্যুজ হয়ে আছে
দৃষ্টিটা আবিকল মানুষের মত ।


ক্ষুধার্ত জীবটার কাছে কেউ
মাংসের টুকরো নিয়ে ছুটে যায় না ।
ক্ষুধার্ত জীবটার কাছে
ভাতের থালা নিয়ে কেউ ছুটে যায় না,
চারদিকের কোন মানুষ
হা হা করে উঠেনা ।



কষ্ট


তুমি সারাদিন বৃষ্টি দেখলে
জানালার আরশী ভেজা কপাট খুলে
উদাস হলে উদ্ভ্রান্ত বাতাসে
কয়টি পিঁপড়ে সাঁতার কেটে রাস্তা পেরুলো।

অথচ দেখলেনা
আমার দু’চোখের দু’ফোঁটা
কষ্ট ছোঁয়া কামনার জল ।

তার চোখ

আমি ভোরের শিশিরে খুঁজি মনিকা মেয়ের চোখ,
সারা রাত ধরে রজনী কেঁদে কেঁদে হয়েছে সারা,
ঘাসের শরীরে পড়ে আছে রাতের আশ্রুধারা-
সেই থেকে হয়েছি উদাস, তার চোখে রেখেছি আমার চোখ।

বলিবনা কথা ছুঁইবনা ঘাসের নরম শরীর,
শুধু চোখে চোখ রেখে বলে যাব হৃদয়ের কথা;
এই মোর ভালোবাসা, এই মোর অলস নীরবতা-
আমি এই খানে বেঁধেছি এবার আমার গোপন নীড়।

ধানের নরম শীষে লেগে থাকে ভোরের শিশির
প্রজাপতি উড়ে আসে সিক্ত করে এলো মেলো পাখা,
সমস্ত শরীর জুড়ে এই রঙ হয়ে গেছে আঁকা-
তার চোখ রাত্রির স্বেদ থেকে গলে পড়া এক ফোঁটা নীর ।।

ইস্পাত নগরে রক্ত বৃষ্টি

পেন্ডুলামের মত ঝুলে আছে শরীর
তোমার পায়ের নীচে প্রাণহীন নগর,
দু’পায়ে মাড়াও বর্বর ইস্পাত সভ্যতা
মেঘের আড়ালে মেঘ, উড়াও মাংসের ভেলা।
ক’পশলা রক্ত ঝরালে তুমি অগুন্তি রক্ত কনা
নির্জীব অহংকারী রক্ত খেকো এ ইস্পাত নগরে।
তোমার শরীর থেকে ঝরছে রক্ত বৃষ্টি
থেতলানো মাংসপিন্ড স্যন্ডউইচের মত
ঝুলে আছে শুন্যে তাজা তকতকে ।
তোমার থেতলানো মাংস ড্রিপফ্রীজে সংরক্ষণ হবে
এ নগর তোমার মাংস কিমা করে রাখবে,
এ নগর তোমার হাড় দিয়ে ন্যাপকিন বানাবে
এ নগরে তোমার ঘাম দিয়ে সফ্ট ড্রিঙ্কস হবে
তোমার অশ্রু দিয়ে হবে সার্ক ফোয়ারা।

শূন্যে ঝুলে তুমি দেখ ঐ প্রাণ
দূর দিগন্তে তোমার ছায়া ছায়া গ্রাম
বিছানো শষ্য ক্ষেত শীতল জলধারা
হাতছানী দেয় সোঁদা গন্ধমাখা সবুজ।

ঘৃনা ও থুথুতে ভাসাও নিষ্প্রাণ নির্জীব ইস্পাত নগর
যতই আলো জ্বলে তাতে, ততই আঁধার তার বদ্ধ কবর ।

(রেঙ্কস ভবনে শূন্যে ঝুলে থাকা শ্রমিকের লাশের ছবি দেখে)

সাদামনের মানুষ: ডাঃ মানবেন্দ্রনাথ সরকার


#
ফিচারটি দৈনিক প্রথম আলোর ‌৫ডিসেম্বর ২০০৩ শুক্রবারে 'অন্যআলোতে‌' ছাপা হয়েছিলো এবং ইউনিলিভার ঘোষিত ‌'সাদামনের মানুষ' প্রতিযোগীতায় নির্বাচিত হয়। ২৬ মে ২০০৮ সন্ধ্যা ৭.৫০ মি: এটিএন বাংলায় এটি প্রচারিত হয়।
#


কল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষ পৃথিবীতে পদার্পণ করে এক ও অভিন্নরুপে। মাতৃজঠর থেকে অজস্র রক্তস্নাত হয়ে ভুমিষ্ট হয় শিশু। এই মায়ের কাছে তার আজন্ম ঋণ। মাতৃকোল থেকে সে স্থান পায় আর এক মায়ের কোলে। সে মা তার মাটি, তার মাতৃভূমি। মানুষটি যখন বড় হয়, একজন শিক হয়, ডাক্তার হয়, ইঞ্জিনিয়ার হয় তখন তার এই বড় হয়ে উঠার পিছনে থাকে গ্রামের বা সমাজের মানুষের বড় অবদান। তারা প্রত্য পর ভাবে সেই মানুষকে মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার জন্য চেতনে অবচেতনে সাহায্য করে। ভূমিষ্ট সেই মানুষটি ঋনবদ্ধ হয় তার জন্মদাত্রী মা এবং দেশের মানুষের প্রতি। সেই ঋণবদ্ধতার দায় থেকে কেউ কেউ নিস্কৃতি পেতে পারেনা। এই দায়বদ্ধতা থেকে ডাঃ এম.এন.সরকার জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যানে। কুমিল্লার মুরাদনগরের অযাচক আশ্রমের অধ্য ডাঃ মানবেন্দ্র নাথ সরকার একজন ব্রহ্মচারী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেন। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী নামেই তিনি পরিচিত। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দু’শ রোগী দেখেন তিনি। এ জন্য তিনি রোগীদের কাছ থেকে কোন ফি নেন না। তবে আশ্রম পরিচালনার জন্য পাঁচ টাকা এন্ট্রি ফি নেয়া হয়। রুগীরা এখানে পান সর্বোচ্চ সেবা। এখানে এসে পরম প্রসস্তিতে ভরে যায় রোগীদের হৃদয়। রুগীদের প্রতি থাকে সুন্দর ব্যবহার এবং কেউ কেউ পান বিনামূল্যে ঔষধ। এই ঔষধগুলো বিভিন্ন ঔষধের কোম্পানীগুলো ফ্রি মেডিকেল সেম্পল হিসাবে আশ্রমকে দিয়ে দেয়। তাছাড়া কাছেই গড়ে উঠেছে একটি ডিসপেন্সারী। সেখানে অনেক কমমূল্যে ঔষধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঔষধের কোম্পানী কমমূল্যে এখানে ঔষধ সরবরাহ করে। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারীকে সহযোগিতা করার জন্য আরো তিন জন সহযোগী রয়েছেন। নিরঞ্জন ঘোষ ও সুজিত সাহা, আশ্রমের পাশেই তাঁদের বাড়ী। তারা বিনা শ্রমে এখানে সেবা দান করেন।

অযাচক আশ্রমের প্রতিষ্ঠা ঃ
বাংলা ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, ইংরেজী ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিঃ মিঃ দূরে মুরাদ নগর থানার রহিমপুর গ্রামে এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অখন্ড মন্ডলেশ্বর শ্রী শ্রী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব এ আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক মানবতাবাদী এক মহান গুরু। তার মূল জন্মস্থান চাঁদপুরে। জ্ঞান অন্বেষা ও মানুষের কল্যাণে তিনি পরিব্রাজক হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তখন ঘুরতে ঘুরতেই এই গ্রামে মানুষের কল্যাণে কিছুদিন কাটিয়েছেন। তখন তিনি ছোট আকারে এখানে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রম গড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ সাধন। চিন্তা চেতনা ও শারীরিক ভাবে মানুষ নানা প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সে ক্ষতি অনেক ক্ষেত্রে তার নিয়ন্ত্রনে থাকে না। তখন সে মানুষের প্রয়োজন হয় অন্যের সেবা গ্রহণ করা। কোন মানুষের চৈতন্যে যখন অসুস্থতা দেখা দেয় তখন সমাজ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর উপর তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া ঘটে। কখনো কখনো সমাজ হয়ে উঠে সহিংস আত্মঘাতি। মানুষে মানুষে দেখা দেয় হিংসা হানাহানি। মানুষের ভিতর বেড়ে যায় কুচিন্তা, কু-কর্ম। সমাজে মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তখন প্রয়োজন হয় আত্মশুদ্ধীর। অযাচক আশ্রম সে আত্মশুদ্ধীর কাজটি করে যায় নিয়মিত। এখানে সকাল সন্ধ্যা নিয়মিত ধ্যান ও উপসনার আয়োজন করা হয়। নানান উৎসব ছাড়াও আশ্রমে আয়োজন করা হয় ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’।


সেবায় উৎসর্গকৃত প্রাণ ঃ
ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী মানব সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেবার এক গোপন মনবাসনা তাঁকে আশৈশব তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। আশ্রম থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে তার নিজ বাড়ী। মানুষ সেবার কাজ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন শৈশব থেকে। তিনি পড়াশুনা করেছেন চট্রগ্রামে। বাবা প্রয়াত সুধীরঞ্জন সরকার একটি সুইস প্রতিষ্ঠান ‘ভলকার্ড’ এ চাকুরী করতেন। তার মা ৬৪ সালে ‘করোনারী হার্ট ডিজিজে’ মারা যান। সে সময় এ চিকিৎসার খুব উন্নতি ছিলোনা। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী জানালেন, ১৯৮৪ সনে তিনি এ আশ্রমের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হন। সে থেকেই তিনি এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৩ সালের দিকে তিনি যখন স্কুলের ছাত্র তখন এই আশ্রমের সঙ্গে যোগসূত্র হয়। তাঁর গুরুদের অখন্ড মন্ডলেশ্বর শ্রী শ্রী স্বামী স্বরুপানন্দ পরমহংসদেবের কিছু উপদেশ তাঁকে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করে। তাঁর জীবনের কয়টি মৌলিক বিষয় হলো ‘তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাকনা কেন মানুষের কল্যান তোমাকে করতে হবে। যতটুকু পার, যারমধ্যে বেশী সে বেশী করবে। যে পারবে না সে তার খাদ্য থেকে কিছুটা উৎসর্গ করবে। অর্থাৎ কিছু একটা করতেই হবে। মানুষ বিভিন্ন বিষয়কে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গুরুজী জন্মটাকেও সে ভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গুরুজী বলেন, ‘দিয়ে দিবার তরে, তোর জীবন পেয়েছি, রক্ত দিব বলে মায়ের রক্ত নিয়েছি’। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী কথাগুলো ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘তুমি যে জন্ম গ্রহণ করেছো, মায়ের রক্তস্নাত হয়ে পৃথিবীতে এসেছো, এতে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, তোমাকে এ ঋন শোধ করতে হবে। পৃথিবীর জন্য রক্ত দাও। এই যে একটা জিনিস কিছু করতে হবে পৃথিবীর জন্য সমাজের জন্য। আজকে অনেকেই অনেক কিছু বলেন, হয়তো আমি বলতে পারি আমার বাবার পয়সায় আমি ডাক্তার হয়েছি। কিন্তু তা তো না। প্রত্যক্ষ বা পরক্ষভাবে সমাজের একেবারে অতি দরিদ্র শ্রেণী থেকে উচ্চ বিত্ত পর্যন্ত সকলের কিছু না কিছু সেবা আমি গ্রহণ করেছি। আমি তাদের প্রতি দায়বদ্ধ। আরেকটা জিনিষ হলো, মানুষ মাত্রই সমাজ। বিভিন্ন কারনে যে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হয়। সুন্দর কথা সবাই বলেন, কিন্তু গুরুজী বলেন, পৃথিবীর সকল সম্প্রদায় আমার, আমি সকল সম্প্রদায়ের। কাজেই আমি খোঁজ করছিলাম যে এমন কিছু পাই কিনা। আমি আমার পিতা মাতার কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা আমাকে এই মিশনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। দেখুন, মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তানদের শিক্ষা দেয়া হয়, তুমি পরিবারের জন্য কিছু কর। সুতরাং ছোট বেলা থেকে আমার মন মানসিকতা এ আশ্রমের উপযোগী করে গড়ে তুলি। স্কুল কলেজ জীবন শেষ করে ১৯৭৩ সনে আমি চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। ডাক্তারী পাশ করার পর কিছুদিন পরই স্থায়ী ভাবে এখানে চলে আসি। সে থেকে চেষ্টা করছি গুরুদেবের আদর্শ ভাবদর্শন চর্চা করা। মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়া। গুরুদেব বলেন, ‘আমি হিন্দুও চিনিনা, মুসলমান ও চিনিনা, আমি চিনি মানুষকে’।

সেবাদান কর্মসূচী ঃ
ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী জানান, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আশ্রম থেকে মানুষদের নানাভাবে সেবাদান করে আসছে। তাঁর আশ্রমে আসার পরই এখানে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস চালু হয়। প্রথম নেয়া হতো জন প্রতি এক টাকা। এখন নেয়া হয় মাত্র পাঁচ টাকা। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এখানে সেবা গ্রহণ করেছেন। এখানে গড়ে উঠেছে একটি মেডিকেল ষ্টোর। সারা বাংলাদেশের থেকে সবচেয়ে কম দামে এখানে ঔষধ পাওয়া যায়। আগে এটা চিন্তাই করা যেতো না। তিনি জানান, যারা এখানে সেবা গ্রহণ করছেন এটা তাদেরই দয়া। কারন দীর্ঘ সময় ব্যয় করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দূরদুরান্ত থেকে মানুষ আসেন। তারা আমাদের সীমিত সুযোগগুলো গ্রহণ করেন। আমরা চেষ্টা করি তাঁদেরকে ‘পেশান হিয়ারিং’ দিতে। এখানে যারা একেবারে দরিদ্র তাদের জন্য বিনামূল্যে কিছু ঔষধ সরবরাহ করা হয়। এগুলো বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীগুলো ফ্রি মেডিকেল স্যাম্পল হিসাবে দিয়ে থাকেন। আরেকটা হলো বিভিন্ন হাসপাতালে যখন আমরা কোন রুগী রেফার করি তখন তারা সে রুগীদের খুব যত্নের সাথে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কারন আমাদের তো একেবারে সীমিত ব্যবস্থা। এখানে সার্জারী বা বড় ব্যবস্থার আয়োজন নেই। তবে কোন সার্জারী রুগী যদি আমাদের এখান থেকে কোথাও পাঠানো হয়, তাঁরা চেষ্টা করেন তাঁকে সর্বোচ্চ সেবা দান করতে। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে তা হলো মানসিক ভাবে রুগীরা এসে এখানে তৃপ্তির সুধা নিয়ে যান। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন তাঁরা সেই অসুখের চাইতেও মানসিক ভাবে বেশী পর্যুদস্ত হন। তখন তার রোগের চিকিৎসার সাথে সাথে নম্র ভাষায় একান্ত আপন হয়ে যদি মনের জোরটা বাড়ানো যায় তবে সে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠে। এখানে সার্বনিক যারা সেবা দান করছেন তাঁরা সে কাজটি করে যাচ্ছেন পরম মমতা দিয়ে।

ব্রহ্মচারী জীবনাচার ঃ
ব্রহ্মচারীর শব্দের অর্থ হলো যে নিজেকে সর্বোত ভাবে ঈশ্বর তথা ঈশ্বরের সৃষ্টির জন্য জীবন উৎসর্গ করে। এটাকে সংক্ষেপে ব্রহ্মচারী ব্রত বলা যায়। সাধারন ভাবে মানুষ সংসার জীবনে জড়িয়ে পড়ে। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী সে রকম কোনে আকর্ষন বোধ করেননি। তিনি বলেন, এ আকর্ষনের চেয়ে অধিক বেশি তিনি মানুষের জন্য কিছু করার আকর্ষন বোধ করেন। সে কারনে তিনি ব্রহ্মচারী ব্রত গ্রহণ করেছেন। ’৭৮ সনে চট্রগ্রাম মেডিকেল থেকে তিনি ডাক্তারী পাশ করেন। মানুষকে সেবা করার ব্রত নিয়েই তিনি ডাক্তার হয়েছেন। তার আগে তিনি চট্রগ্রাম কলেজ থেকে ’৭২ সনে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এই আশ্রমে ৮ জন সার্বক্ষনিক কর্মী রয়েছেন। তবে সবাই ব্রহ্মচারী নন। এখানে যেমন রয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত কর্মী তেমন সাধারন লেখাপড়ার কর্মীও রয়েছেন। সিলেটের হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন শংকর ব্রহ্মচারী। তিনি জানালেন গুরুজীর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়েই তিনি এই আশ্রমে এসেছেন। সর্বাঙ্গে শ্বেত শুভ্র পোষাকে আবৃত থেকে সর্বদা মনকে সুচীশুদ্ধ করে তুলছেন। সংসার ধর্ম তিনি আর পালন করবেন না। ত্রিশের কোঠায় বয়স হলেও জানালেন মানুষের সেবা করে যাওয়াই হবে তার আগামী জীবনের সাধনা। কর্মী কমল দেবনাথ এসেছেন বরিশাল থেকে। বরিশাল বি.এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স করে গুরুজীর সেবার জন্য এসেছেন। তিনি আশ্রমের প্রকাশনা ও লাইব্রেরীর দায়িত্বে রয়েছেন। আশ্রমের কম্পিউটারের কাজ তিনি করে থাকেন। তরে তার বয়স কম। সোম্য চেহারা। বল্লেন এখনো ঠিক করেনি ব্রহ্মচারী হবেন না সংসারী হবেন। আশ্রমের পাশেই নিজের বাড়ী রয়েছে কর্মী সুজিত সাহার। মধ্যম বয়সী এই কর্মী জানালেন ক্লিনিকে ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারীকে তিনি সার্বনিক সহযোগিতা করছেন। সেচ্ছাসেবক হিসাবে তিনি এখানে কাজ করেন। এর জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন না। তিনি জানান, আমাদের সংসার আছে, বৌ বাচ্চা আছে, অন্য কাজ কর্মও আছে, আমি ব্রহ্মচারী নই। ব্রহ্মচারী হওয়া সাধনার বিষয়। ঘোষণা দিয়েও ব্রহ্মচারী হওয়া যায়না। এটা নিজের সঙ্গে আত্মার অঙ্গীকার। এই আশ্রমে কোন নারী সেবাকর্মী নেই।

আশ্রমের আয় ও কার্যক্রম ঃ
অযাচক আশ্রমটি চলছে মূলত তার নিজস্ব আয়, বই প্রকাশনা ও বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায়। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী জানালেন অযাচক শব্দের অর্থ কারো কাছে কোন কিছু যাচা বা চাওয়া নয়। নিজের যে সম্পদ আছে এবং নিজস্ব সম্পদ বাড়িয়ে তা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা। এ লক্ষে তারা বিভিন্ন মাছ চাষ, গবাদী পালন বিভিন্ন প্রকার কৃষি করে আয়ের ব্যবস্থা করছেন। এ অঞ্চলে একসময় মানুষ ধান ছাড়া কিছুই করতো না। মানুষ মনে করতো শুধু ধান চাষই কৃষি। নানা রকম শাক সবজি উৎপাদনও যে কৃষির অংশ তা এ অঞ্চলের মানুষ জানতো না। এই আশ্রম থেকেই প্রথম নানা রকম সবজি উৎপাদন শুরু করে এবং তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আজ এ অঞ্চলে একটি খালি জমিও পাওয়া যাবেনা যেখানে কোন না কোন কৃষি উৎপাদন হচ্ছে না। ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী জানালেন, এ নিয়ে তাঁরা নানা ভাবে গবেষণাও করছেন। আশ্রমের মধ্যেই রয়েছে বড় একটি পুকুর। সেই পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। একবার দেখা গেল সেই পুকুরের কিছু মাছ কোন রকম কারন ছাড়াই মারা যাচ্ছে। কি কারনে মাছ গুলো মরে যাচ্ছে কেউ ধরতে পারছিলেন না। তখন তাঁর একবার সুযোগ হয়েছিলো নতুন দিল্লিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার ফেয়ার’ এ অংশগ্রহণ করার। সেখানে তিনি জানতে পারেন এক ধরনের ‘এলজি’ বা শেওলা এ মাছগুলোর মরার কারন। যেখানে মানুষ কিংবা গবাদী পশুর মূত্র যদি বেশী যায় তাহলে সেখানে এই শেওলা জন্মে এবং মাছের মড়কের কারন হয়। এখন তাঁরা গবাদী পালন সাময়িক ভাবে বন্ধ করে রেখেছেন। সাধারনতঃ বলা হয়ে থাকে পুকুরে তিনটি স্তরে তিন জাতের মাছ চাষ করা যায়। পুকুরের তলায় মৃগেল জাতীয় মাছ মাঝে রুই জাতীয় মাছ এবং উপরে কাতল জাতীয় মাছ চাষ করার কথা বলা হয় মৎস্য বিভাগ থেকে। এখন তারা পুরো পুকুরকে এক জাতীয মাছ চাষ করছেন। যেমন তোলাপিয়া চাষ করা হচ্ছে। এ মাছের সবচেয়ে অসুবিধা হলো এরা খুব দ্রুত বাচ্চা দেয় তাতে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই হয় বেশি। মা তেলাপিয়াকে মাসখানেক রেখে হরমন দিয়ে পুরুষ চরিত্র করা যায় কিনা তা তারা দেখছেন। এ দেশে তার কার্যকারিতা কেমন তা তারা গবেষণা করে দেখছেন। আরো তারা ভাবছেন কৈ মাছ চাষ করবেন। কৈ এর পোনা আসবে থাইল্যান্ড থেকে। এ থেকে তারা যদি সফল হতে পারেন তা হলে বড় লাভ জনক প্রকল্প গড়ে উঠবে এ সেক্টরে। তিনি বল্লেন, দেখুন আমাদের দেশ মূলতঃ কৃষি প্রধান। কিন্তু সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে এ নিয়ে কেউ ভাবছেনা। গবাদী পশুর চিকিৎসা কিংবা উন্নয়নের জন্যও আমরা কেউ ভাবছিনা। সরকারের এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া দরকার।

পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে তিনি বল্লেন, দেখুন, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। কীটনাশক, রাসায়নিক সার ব্যবহার করে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কি করে আমাদের পরিবেশ ঠিক রাখতে পারবো সরকারী ভাবে তা তেমন প্রচারিত হয় না। গণমাধ্যম এ ব্যাপারে সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পারে। কি কারনে ফুলপাখী কীট পতঙ্গ বাঁচবে তার কোন কার্যকরী প্রচার তেমন হচ্ছেনা। আমরা চাই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কিংবা স্বল্প প্রয়োজনে কোন প্রাণী যেন হত্যা না হয়। বিভিন্ন আশ্রমে বলা হয়ে থাকে এটা ছোঁবেনা ওটা ছোঁবে না। আমরা নিরামিশী। কিন্তু সেটা ঐ কারনে নয়। তাই প্রোটিন আমাদের জীবনাচারের সঙ্গে খাপ খায় না। সেটা প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি। কিন্তু সংসারে যারা আছেন তারা প্রোটিন গ্রহণ করবেন। সেটি তার নিজস্ব অভ্যাস।

অযাচক আশ্রমের মূল লক্ষ হলো স্বাবলম্বী হওয়া। সর্বোতোভাবে এ লক্ষেই আশ্রমের কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

আত্মউন্নয়ন ও আত্মশুদ্ধি ঃ
ডাঃ যুগল ব্রহ্মচারী বল্লেন, ‘আমাদের আশ্রমে একটি প্রজেক্ট আছে তা হলো চরিত্র গঠন। আধ্যাত্মিক বা সামাজিক বিশ্বাস তার যাই হোক সে যদি ভাল মানুষ হয়, তাহলে সমাজের জন্য জাতীর জন্য সে তার কিছু সময় ব্যয় করবে। গুরুজী তাই বলে গেছেন ‘তোমাদের চরিত্র গঠন ব্যক্তিগত পর্যায়ই শুধু নয় এটাকে সামাজিক বিপ্লবে নিয়ে যেতে হবে’। তার কারন প্রতিকুলতা এতবেশী যে আপনি একা বা আমি একা তার সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের মনের ভাল অংশটাকে ধরে রাখতে পারবো না। এর জন্য সমমনা যারা তাদের মধ্যে আত্মার সমষ্টিগত কৌশল রপ্ত করতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কল্যাণ বয়ে আনতে পারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামী স্বরুপানন্দ ফাউন্ডেশন নামে বিশ্ব ধর্মতত্ত্ববিভাগ একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে, যা আগামীতে দেশের প্রধান ব্যক্তিদের সহ কিভাবে সাধারন মানুষের নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধন করা যায় সে বিষয়ে চর্চার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গুরুজী বলে গেছেন, মানুষের চরিত্র খারাপ হয় তার মূখ্য কারন অভাবে জন্য, অভাব কেন হয়? আলস্যের জন্য। কাজেই আলস্য দূর করতে হবে। এটা নিশ্চই যে যাদের প্রাচুর্য আছে তাদেরও চরিত্র হরণ হয়। যাদের মাধ্যমে লোভ লালসা চরিতার্থ করছে তারাও অভাবী। সবদিক দিয়ে পরনির্ভরশীল হয়ে তারা অভাবী হয়ে উঠছে। কাজেই মানুষের আলস্য যদি দুর করা যায় তাহলে অনেক ভাবে চরিত্র গঠনে সাহায্য হবে। এ বিষয়ে গুরুজী প্রচুর সাহিত্য রচনা করে গেছেন। আশ্রম থেকে সে বইগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও মাসিক ‘মহাজীবন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা হচ্ছে।

আজ যেমন স্বনির্ভর আন্দোলন, বৃক্ষরোপন কর্মসূচী শুরু হয়েছে, গুরুজী সে কর্মসূচী অনেক আগেই স্বউদ্যোগে করে গেছেন। ১৯৩৯ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনি এ অঞ্চলে ঘরে ঘরে ফলজ গাছ নিজ হস্তে বিতরন করেছেন। তার দেখা দেখি অনেকেই তার প্রচার করেছেন। কোথাও যদি রাস্তা একটু ভাঙ্গা থাকতো, কয় ঝুড়ি মাটি দিলেই সে রাস্তা চলাচলের উপযোগী হয়ে যেতো তা তিনি নিজ হাতেই একা করে দিয়েছেন। মজাপুকুর সংস্কার করেছেন। মানুষ আজ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ পাওয়া অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।

আত্মানুসন্ধানের পথে ঃ
এক মহাকাল থেকে আর এক মহাকালে আত্মার চলছে বিরামহীন অনন্ত যাত্রা। সেই আত্মার ক্ষনিক স্থিতি এই বিশ্বলোক। আত্মা মানবদেহ ধারন করে অতি স্বল্প সময় অবস্থান নেয় ইহলোকে। এই ক্ষীন অবস্থানে মানবের এক কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এই সময় পরের জন্য জীবন দেওয়া এক মহাসুখের বিষয়। ‘পরের তরে জীবন দেওয়া তার যে কেমন সুখ, বুঝবে কি সে আত্মসুখে দুরন্ত যার ভুখ’। এই সুখানুভুতি নিয়েই যদি মানুষ মরনের পারে যাত্রা করতে পারে তবেই তার জন্ম সার্থক হয়। এই আসা যাওয়ার মাঝেই শ্রষ্টার স্বরুপ স্পষ্ট হয়। মৃত্যু হয় অপূর্ব সুন্দর। মরন কেবল নামেই ভয়ষ্কর, মৃত্যু আছে বলেই সৃষ্টি অপূর্ব সুন্দর।

জিদে জিতলে সবাই রাজা

জিদে জিতলে সবাই রাজা">


মাহমুদুল হক ফয়েজ

করিম বিশ্বাস নামে আমাদের গেরামে একটা লোক আছিলো হের বহুত তালগাছ বাইশটা বেগ্গুনাতে তাল ধরতো একদিন তারে কইলাম ‘মামু’ আমারে একটা তাল দ্যাও হেয় কইলো, যা গিয়া, তোর পেটে তাল যাইবো না আমার তখন বয়স আছিলো নয় দশ বছর মামুর কথা শুইন্না খেদ চাইপা গেল গায়ে জ্বালা ধইরা গেলো মামুরে কইলাম ‘ঠিক আছে’ তয় আমার মাথা যখন গরম হইলো, আর কিছু ভালা লাইগলো না আমি তালিবালি কইরা দুইশ টাকা জোগার কইরলাম পরদিন মামুর কাছে গিয়া কইলাম, মামু একটা গাছের তাল কত নিবা মামু চোখ ছোট্ট কইরা আমার দিকে চাইয়া একশ টাকার তাল চাইলো দুইশ টাকা আমি কইলাম সই

হাতকড়া

অবশেষে খুব রাত্রি বেলা
আমার ঘরের কড়া নেড়ে
দোর গোড়ায় এসে দাঁড়ালে।

কুয়াশায় জড়ানো একটা চকচকে
চাকু হাতে তুলে বল্লে
এখন যাকে ইচ্ছে তুমি খুন করো।

আমি নির্দ্বিধায় নিকষ কালো নির্জীব
বেয়াড়া রাত্রিকে খুন করে
এই রক্তাক্ত সকালকে নিয়ে এলাম।

শতাব্দী
আমাকে হাতকড়া পরাও।

নোয়াখালীর অরক্ষিত উপকূল : প্রয়োজন সবুজ বেষ্টনী


অরক্ষিত অবস্থায় নোয়াখালীর দক্ষিন উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস করছে এক চরম আতঙ্কের মধ্যে। সিডরের মত কোনো জলোচ্ছাস এ এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গেলে কি বিপর্যয় নেমে আসবে তা আগে ভাগে কিছুটা ধারনা করা যায়। ভয়াবহ সিডরকে বুক দিয়ে অনেকটা ঠেকিয়ে দিয়েছিলো সুন্দরবন। এই বনাঞ্চল না থাকলে সিডরে যে প্রাণহানী ঘটেছিলো তারো চেয়ে অনেকগুণ প্রাণহানী যে ঘটতো সে ব্যপারে সকলেই এখন প্রায় নিশ্চিত।

১৯৫৮ ও ’৬০ সনে নোয়াখালীর উপকূলে পর পর দুটি বড় ধরনের জলোচ্ছাস আঘাত হানে। এর ফলে উপকূলীয় অনেক মানুষের প্রাণহানী ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। এ এলাকাটি ভৌগোলিক অবস্থানের কারনে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে যায়। গত এক শত বছর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময় শক্তিধর বেশ কয়টি সাইকোন এই এলাকার উপর বয়ে যায়। সেগুলো তখন জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে।
এ বিষয়টি বিবেচনা করে তখন নোয়াখালীর সমগ্র উপকূল জুড়ে একটি প্রাকৃতিক সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার এক মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। নোয়াখালী বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ‘উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী' নামে এই কাজটি শুরু হয় ১৯৬৭-৬৮ সন থেকে। সেই থেকে ২০০০ সন পর্যন্ত প্রায় ১ ল ৪৫ হাজার একর জমিতে ম্যনগ্রোভ বন সৃজন করা হয়। এর মূল ল্য ছিলো সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছাস থেকে উপকূলের মানুষদের জানমাল রা ও পরিবেশ সংরণ। এর ফলে উপকূল জুড়ে শুধু সবুজ বেষ্টনিই সৃষ্টি হয়নি, উপকূলীয় এ জেলায় পর্যটনেরও এক অসীম সম্ভাবনা দেখা দেয়। সাগরের লোনা জল ছোঁয়া দিগন্ত বি¯তৃত সবুজ বন যে কোনো মানুষের হৃদয় মোহিত করে দিতো। সেই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে সে এলাকায় প্রায় দর্শণার্থীর ভিড় লেগে থাকতো। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের। ধারনা করা হয় এই বনটি হয়ে উঠেছিলো এশিয়ার বৃহত্তম মানব সৃষ্ট ম্যনগ্রোভ বন হিসাবে। কিন্তু মাত্র দু’চার বছরের মধ্যেই গুটি কয়েক মানুষের লোভাতুর দৃষ্টি, সীমাহীন ভূমিগ্রাসীতা, দুর্নীতি ও বনদস্যুতার জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় নোয়াখালী উকূলীয় এই দৃষ্টিনন্দন সবুজবেষ্টনিটি। সে সময়ের প্রশাসনও এই ধ্বংসযজ্ঞকে নীরবে যেন সায় দিয়ে গিয়েছিলো।

নোয়াখালীর নতুন জেগে ওঠা চরে বনায়নের কাজ শুরু করতে প্রথমে চর জব্বার ও হাতিয়াকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। ১৯৭০ সনের ১২ নভেম্বর ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলে পাঁচ লাখ মতান্তরে দশ লাখ মানুষ নিহত হলে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি অনুভূত হয়। স্বাধীনতার পরে ব্যাপক আকারে বনায়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। ১৯৭৬ সনে বন বিভাগের সঙ্গে সরকার এক চুক্তি স্বার করে। চুক্তিতে বলা হয় দশ বছর পর জমি পোক্ত হলে তা আবার সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেবে এবং তা ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক নম্বর খাস খতিয়ানে চলে আসবে। ১৯৮৮ সনে আর এক ঘোষণায় তা দশ বছর থেকে বাড়িয়ে বিশ বছর করা হয়। কাজ শুরু করার সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বন বিভাগকে ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর ভূমি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। কাগজে কলমে এত বিপুল পরিমাণ জমি দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কারণ এই বিপুল জমির অধিকাংশই এখনো সাগর থেকে জেগে ওঠেনি।

অপরদিকে নোয়াখালী জেলা ভূমি রাজস্ব বিভাগ বলছে, ২ লক্ষ ১১ হাজার একর সদ্য জেগে উঠা ভূমি বনবিভাগের কাছে বনায়নের জন্য হস্তান্তর করা হয়। যার মধ্যে ডুবা চর ও ভেঙ্গে যাওয়া চরে প্রায় ৯৭ হাজার একর ভূমি বনায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে শুধু ১ ল ১৪ হাজার একর ভুমিতে বন সৃজন করা হয়েছে। এ অবস্থায় বন বিভাগে জমি প্রদান এবং প্রশাসনের কাছে পুনরায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছুটা মতভেদ দেখা দেয়। উপকূলীয় এ বন ধ্বংসের জন্য একে অপরকে দোষারোপও করতে থাকে।

নোয়াখালীর দক্ষিনে সুধারাম ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি সীমানা ধরে দক্ষিন প্রান্তে সত্তরের দশক থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চর, যা পরবর্তীতে বয়ার চর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বন বিভাগ এ চরে ব্যাপক বনায়ন করে। কিন্তু পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এই বনাঞ্চল। এক সময় পুরো বন সন্ত্রাসীরা দখল করে নেয়, উচ্ছেদ হয়ে যায় বন বিভাগ। এ সময় যথেচ্ছ ভাবে বন ধ্বংস হতে থাকে।

‘৯০ এর দশক থেকে পর্যায়ক্রমে নোয়াখালীর বনাঞ্চল গুলোতে নানান সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের আস্তানা গাঁড়তে শুরু করে। তাদের মধ্যে রয়েছে বাশার মাঝি, নব্যা চোরা, সফি বাতাইন্যা, সোলায়মান কমান্ডার, জাহাঙ্গীর মাঝি প্রমুখ সন্ত্রাসীরা। তখন ব্যাপক জনশ্র“তি ছিলো এই সব সন্ত্রাসীদের লালন পালন করে আসছিলো কিছু রাজনৈতিক নেতা, ভূমিগ্রাসী জোতদার এবং কিছু চিহ্নিত শিল্পপতিরা। তারা এই সব সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে নিজেরা বিপুল পরিমান সরকারী খাসজমি দখল করে নেয়। কেউ কেউ সরাসরি এ বন ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত ছিলো। সেই সব জমিতে আনেকেই গড়ে তুলেন বিশাল বিশাল মৎস্য খামার। অভিযোগ রয়েছে এই ভূমিগ্রাসীরা অনেক নিরিহ ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে নতুন নতুন চর দখল করে নেয়। চর মজিদ ষ্টিমার ঘাটের পাশে ছিলো বন বিভাগ সৃজিত মনোরম বন এলাকা। নোয়াখালীর একটি শিল্প গোষ্ঠি সে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সেই বন উজাড় করে একটি বিশাল মৎস্য খামার গড়ে তোলে। তখন প্রশাসন বন কাটা থেকে বারবার বিরত থাকতে বলা হলেও তারা কাউকে তোয়াক্কা করেনি। অনেকে মনে করেন প্রশাসনের সেই কার্যক্রম ছিলো লোক দেখানো। প্রশাসন ইচ্ছে করলে তখন সহজেই তা ঠেকাতে পারতো। এরকম আরো কিছু এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী মহল চরাঞ্চলের জমিগুলো অবৈধ ভাবে দখল করে মৎস্য ও চিংড়ি খামার গড়ে তুলেছে। এখনো এদের আগ্রাসন থেমে থাকেনি। অন্যদিকে কথিত ভূমি দস্যুরা বন উজাড় করে এক একজন ভূমিহীনের কাছে দুই আড়াই একর করে জমি মেপে মেপে বিক্রি করতে থাকে। শহরের কিছু আবস্থাপন্ন মানুষও এ সুযোগে বেশ কিছু জমি দখল করে নেয়। চরাঞ্চলে নেমে আসে এক অরাজক পরিস্থিতি।

বনদস্যু ও জোতদারদের হাতে উপকূলীয় চরাঞ্চলের প্রায় ৭০ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার পরে বয়ার চর, নাঙ্গলীয়া, নলের চর, কেরিং চর ও আশেপাশের চর নিয়ে হাতিয়া উপজেলার হরণী ও চানন্দী ইউনিয়ন ঘোষিত হয়। এক সময় বঙ্গপসাগর বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার এই দুটি ইউনিয়ন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে তা আবার পয়স্তি হয়ে নোয়াখালী সদরের সাথে সংযুক্ত হয়। লোকমুখে তা বয়ার চর হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। সে বয়ার চরই এখন হাতিয়ার অংশ। এই বয়ার চরকে নিয়ে সরকারী উদ্যোগে চর উন্নয়ন সংস্থা (সি ডি এস পি) ভূমিহীনদের বসতি স্থাপন প্রকল্প গ্রহন করে। বন বিভাগের হিসাব মতে সাগর মোহনায় এই বয়ার চরে ১৩ হাজার ৭০০ একর জমির বন ধ্বংস হয়ে যায়। এখন এখানে ১২ হাজার পরিবারের ৬০ হাজারের অধিক মানুষ বসবাস করছে। সাগর সঙ্গমের এই চর গুলোতে অরক্ষিত অবস্থায় বাস করছে হাজার হাজার ভূমিহীন পরিবার। সব মিলিয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছে। এ এলাকা গুলোতে এখনো কোনো সরকারী সুযোগ সুবিধা পৌঁছায়নি। সাগরের কোল ঘেঁসা এ এলাকা প্রতিনিয়ত জলোচ্ছাসের আতঙ্ক বিরাজ করে। এ অবস্থায় উপকূল জুড়ে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার আর কোনো বিকল্প নেই।

গত ২ মে মায়ানমারের উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করি সামুদ্রিক ঝড় ‘নার্গিস’। এ ঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা ছিলো প্রচুর। সব ঝড়ের গতি প্রকৃতি এক রকম নয়। ঝড়টি যদি সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতো তাহলে সিডরের পরপরেই আরেকটি দুর্যোগ নেমে আসতো এই দুর্ভাগা বাংলাদেশে। নোয়াখালীর অরক্ষিত উপকূলে এর চিত্র হতো আরো ভয়াবহ।

বিগত সময়ে বন ধ্বংসের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, শুধু উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুল্লেই এর কাজ শেষ হবেনা। একে রক্ষনাবেক্ষনের গুরু দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। প্রয়োজন বোধে কোষ্টগার্ড ও বন নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করে সুষ্ঠ ব্যাবস্থাপনা গ্রহন করা প্রয়োজন। নতুন করে বনায়ন করার সময় দেশী গাছের জাত নির্বাচন এবং পর্যটনের বিষয়টিও পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে এ এলাকায় এক নব দিগন্তের সূচনা হবে বলে সকলের বিশ্বাস।

প্রথম আলো
শনিবার,১০মে,২০০৮,২৭ বৈশাখ ১৪১৫


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
গবেষক ও ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক
মাইজদি কোর্ট, নোয়াখালী
মুঠোফোন: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail- mhfoez@gmail.com

ঘর



ঘর
ঘরের মানুষ ঘরেই আছি
ঘর ছেড়েছি কোথা !
ঘর যে আমার পথে ঘাটে
বসত হেথা হোথা ।।

Bristy

Rowdro

ফাজলামো

তুই ফাজলামো ছেড়ে দে, ফাজিল,
রাজনীতি ফাজনীতি করে
ফাজলামো করা যায়না, পাগল।

চোখের ভিতর ক্ষত রেখে তোর
দেখা যাবে কি পৃথিবীর অতল ক্ষত গহ্বর ।
তোর প্রাণে সুর বাজেনা
বীনার তারে সুর বেঁধে মূর্ছনা ছড়াবি কোথায় !
তুই ফাজলামো ছেড়ে দে ফাজিল ।।

চোখ

চোখের ভিতর চোখ
তোমার চোখের
একটু চাওয়া
জীবণ জাগার শ্লোক ।

চৌমুহনী কলেজ

বিষন্ন দপুর মরে যায়
হলুদ বিকেল ছায়া ফেলে কলেজের আঙ্গিনা ’পরে
তখন বেরোই প্র্যাকটিকেল ক্লাশ থেকে ।
আঁতরের মতন জড়িয়ে থাকে
হাইড্রোজেন সালফাইড, ক্লোরিনের জল ।
এক স্বর্গ থেকে আরেক স্বর্গে রাখি পা
ছাত্র শূন্য কলেজের করিডোর ।
বাংলা কমার্স দর্শন ক্লাশ হয়ে গেছে শেষ-
বাংলা বিভাগের ক্লাশ শেষে
রূপসী মেয়েরা চলে গেছে
শাড়ির গন্ধ রেখে গেছে সবুজ ঘাসের পাতায়-
সেই ঘাসে রাখি পা, গন্ধ নেই
আবসন্ন শরীর জুড়াই সবুজ ঘাসের শরীরে ।
ইউকেলিপ্টাসের সূউচ্চ ডাল থেকে
কলেজ ডেকে বলে, ‘এসো,
আমার শরীরে শরীর রাখ, শব্দের মতন গতিশীল হও’
আক্ষরিক নীতি ছড়ায় তথাগত বুদ্ধের মতন ।

নারিকেল তলায় আযথা দাঁড়িয়ে থাকা
অবাধ্য পাখিদের মতন অর্থহীন উল্লাস
বায়হনিয়া অথবা বকফুল গাছ থেকে
ফুল তুলে আনা
উদাস কবিদের মতন সেই ফুল হাতে নিয়ে ঘুরা !
কলেজ আঙ্গিনা থেকে এই সব দৃশ্য
শেষ হবে কবে ?
বাংলা অধ্যাপকের সাথে ইদানিং সাহিত্য নিয়ে
তুমুল তর্কে মেতে উঠা
এই পৃথিবীর রাজনীতি কোন পথে যাবে
তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আর কত দেরি
বিজ্ঞানের গভীর অরন্যে ডুব দিয়ে
কোন এক বিজ্ঞানী নতুন দিগন্ত করেছে প্রসার ।
সব কিছু সমাধা করে দেয়
কলেজ আঙ্গিনা পাড়া ।

একদিন এই সব মূহুর্তগুলো ইতিহাস হয়ে রবে ;
চোখের পলক, প্রতি পদক্ষেপ, হাসি গান
প্রেম আনন্দ কোলাহল ।
এই গনিপুর নরত্তমপুরের বুকের মধ্যে
চৌমুহনি কলেজের মূহুর্তগুলো
হৃদয়ের নির্বাচিত রক্তের করুন স্রোতে
ইতিহাস হয়ে জেগে রবে
শুধু জেগে রবে ।।

বৃক্ষ

আমার আর এক যমজ ভাই হলে
সে হোতো বৃক্ষ ।
আমার আর এক হৃদপিন্ড থাকলে
সে হোতো বৃক্ষ ।

আমার পিতার ঔরসে আর একটি
শিশু জন্মালে
সে হোতো বৃক্ষ,
প্রাণ এবং অস্তিত্বের
আর এক শরীর-
সেতো বৃক্ষ।

প্রতিটি বৃ আমার প্রাণ
প্রতিটি পত্রক আমার নিশ্বাস ।

বৃক্ষ


আমার আর এক যমজ ভাই হলে
সে হোতো বৃক্ষ ।
আমার আর এক হৃদপিন্ড থাকলে
সে হোতো বৃক্ষ ।

আমার পিতার ঔরসে আর একটি
শিশু জন্মালে
সে হোতো বৃক্ষ,
প্রাণ এবং অস্তিত্বের
আর এক শরীর-
সেতো বৃক্ষ।

প্রতিটি বৃ আমার প্রাণ
প্রতিটি পত্রক আমার নিশ্বাস ।


এই খানে ডাকেনা’ক পাখি

এই খানে ডাকেনাক পাখি
পড়েনা’ক মনিকা মেয়ের ছায়া ।
চারিদিকে জমিছে আগাছা
অন্ধকারে ডাকিছে অসুর কারা ?
দেয়ালে দেয়ালে হৃদয় কথা বলে
লেখা থাকে আমার ভালোবাসা ।
কারো চোখ হয়নি উদাস
দীর্ঘশ্বাস কথা বলে হৃদয়ের কথা ।
চেয়ে দেখি চারিদিকে জমিছে কুয়াশা
সকালে নরম পাতার ’পরে অশ্রু হয়ে জমে ।।

বিশ্বাস

বিশ্বাস হারালে নারী
অবিশ্বাসের সমুদ্রে কে আর বাঁচাবে তোমায় !

যেজন ডুবে যেতে চায় অসম্ভবের বন্যায়
শরীর জড়িয়ে নেয় কামনার নগ্ন শৈবালে,
তারে কি আর তুলে নিতে পারে
শতাব্দীর বিশাল নূহের কিস্তি !