স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসির প্রস্তুতি

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসির প্রস্তুতি

মাহমুদুল হক ফয়েজ


উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় পৃথিবী। উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় ভোগ বিলাসিতাই এর অন্যতম কারণ। পরিবেশবাদিরা এ রকম অভিযোগের আঙ্গুল তুলে ধরছেন ধনী দেশ গুলোর প্রতি। তাদের লাগামহীন ভোগের উচ্ছিষ্ট আর বিষাক্ত বর্জ্যে পৃথিবী ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে। আর এর জন্য আমাদের মত অনুন্নত আর উন্নয়নশীল দেশগুলোই সবচেয়ে বেশী ভোগান্তির শিকার। তাদের এই কর্মকান্ডের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে গরিব দেশগুলোর গরিব জনগণকে। তাই তিগ্রস্ত দেশগুলোর পে বিশ্বব্যাপি দাবি উঠেছে এর তিপূরণ আদায়ের জন্য। সকলের একই ভাষ্য, উন্নত বিশ্বকেই এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সেই উন্নত ধনী দেশগুলো এখনো এ ব্যাপারে একেবারে নির্বিকার। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরাল ভাবে এ দাবি তুলেছেন। সামনে আসছে এক মহাদুর্যোগ। পৃথিবী উত্তপ্ত হওয়ার কারণে সাগরের পানি ফুলে ফেঁপে উঠবে। আর এর ফলে তলিয়ে যাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। পরিবেশবিদরা আগাম হুশিয়ার করে দিয়েছেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে রয়েছে মালদ্বীপ আর বাংলাদেশ। আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে মালদ্বীপ আর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল তলিয়ে যাবে সাগর ব।ে গৃহহারা, আশ্রয়হারা হবে প্রায় দুইকোটি মানুষ। শুধু তাই নয় উদ্বাস্তু এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির জন্য সৃষ্টি হবে সামাজিক রাজনৈতিক ও আন্ত:দেশীয় সংঘাত। আর কৃষির উপর আসবে চরম আঘাত। ফলে এসব দেশগুলো পড়বে চরম খাদ্য সংকটে। আবহাওয়াতে আসবে অস্বাভাবাাবিক আচরণ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী সবচেয়ে বেশী হুমকির মধ্যে রয়েছে। আবার নানান সম্ভাবনাময় জেলা হিসাবেও এ জেলা স্থান করে নিয়েছে। নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগময়তার মধ্যে এ জেলার উপকূলীয় মানুষ শত শত বছর ধরে বাস করে আসছে। তাই যে কোনো দুর্যোগের খবরে জেলার মানুষকে তেমন বিচলিত হতে দেখা যায়না। বড় বড় সামুদ্রিক ঝড় ঝঞ্ঝা, গর্কী উপকূলের মানুষগুলো প্রত্য করেছে বার বার। তাই যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকেই এরা আমলে আনেনা। শত বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ঝড় জলোচ্ছাস আর নদী ভাঙনে বার বার পর্যুদস্ত হলেও একেবারে নি:শেষ হয়ে যায়নি এ সংগ্রামী মানুষগুলো। তিরিশের দশকে পুরো নোয়াখালী শহর নদী বে বিলীন হয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে সুদৃশ্য দালানকোঠাসহ শত সহস্র বছরের সমৃদ্ধ জনপদ। কিন্তু তবুও হারিয়ে যায়নি নোয়াখালীর ঐতিয্য। হারিয়ে যায়নি মানুষের অফুরন্ত মনবল। নদী ব থেকে আবার জেগে উঠেছে চর। আবার দাঁড়িয়েছে মানুষ। সৃষ্টির মিছিলে মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে আবার সে জনপদ। কারো করুণা নিয়ে নয়। মানুষই পারে মানুষের মত করে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াতে। কিন্তু যে দুর্যোগের ঘনঘটায় আচ্ছন্ন সারা বিশ্ব। সে দুর্যোগ কেমন করে সামাল দেবে উপকূলের মানুষ। তার জন্য কতটুকুইবা প্রস্তুত তারা!কথায় বলে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। পৃথিবী উত্তপ্ত হওয়ার কারণে উত্তর মেরুতে বরফ গলতে শুরু করেছে। গ্রীণল্যান্ডে যেখানে সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে, সে দেশের এতদিনের বরফে ঢাকা মাটি উঁকি দিতে শুরু করেছে। যে মাটিতে কখনো চাষবাস হতোনা সেখানে এখন মাঠে মাঠে চাষ হচ্ছে। সে মাটিতে এখন চলছে সব্জীর আবাদ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রচার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের উপকূলে ঘটবে তার ঠিক উল্টো। উপকূল থেকে হারিয়ে যাবে ল ল একর কৃষি জমি। অতলজলে ডুবে যাবে উর্ব্বর কৃষি জমিগুলো। তাহলে আমাদের উপায় কি!! অসংখ্য দ্বীপের দেশ মালদ্বীপও এই হুমকির সম্মুখীন। তবে তারা একেবারে বসে নেই। ভারত সহ বিভিন্ন দেশে তারা জমি কিনে রাখার জন্য আগাম আবেদন জানিয়েছে। বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেছে নদী ড্রেজিংএর মাটি গুলো তারা কিনে নিতে চায়। নদী ড্রেজিংএর মাটি বাংলাদেশ কি করবে তা সময়মত সরকার হয়ত সিদ্ধান্ত নেবে। ভূতত্ত্ববিদরা হিসাব করে দেখেছেন হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে যে নদী গুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তার জলপ্রবাহের সাথে প্রতি বছর প্রায় আড়াই বিলিয়ন টন মাটি বাংলাদেশে এসে জমা হচ্ছে। এগুলোতে উজানের নদ নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীগুলোর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার সে নদীগুলো খননের পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। সেই নদী খননের মাটিই কিনে নিতে চায় মালদ্বীপ। অন্যদিকে পলিমটি এসে জমা হচ্ছে সাগর মোহনায়। ফলে নোয়াখালীর দণি সাগরে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন দ্বীপ। নোয়াখালীর সীমানা সাগর অভিমুখে ধাবিত হচ্ছে। এভাবে একদিন হয়তো সাগরের মধ্যেই জেগে উঠবে বাংলাদেশ সমান আর একটি ভূখন্ড। ইতিমধ্যে বিপুল পরিমান ভূমি জেগেও উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামীতে আমরা যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হব তার উত্তরনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। কারো দয়া বা ভিার ঝুলিতে আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়াস পরিহার করে কি ভাবে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করা আমাদের জরুরী কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নোয়াখালীর উপকূলের মানুষ অসম্ভব কর্মঠ আর কষ্টসহিষ্ণু। যেকোনো দুর্যোগে আপদে বিপদে এ মানুষগুলো তাদের নিজস্ব মেধা খাটিয়ে টিকে থাকে। আগাম যে বিপদ আমাদের সামনে হাজির হচেছ তা আসার আগেই সে বিপদের ধরণ এই মানুষগুলোকে সঠিক ভাবে জানানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। নদী ড্রেজিংএর মাটিগুলো দিয়ে নীচু ভূমি ভরাট করা যায় কিনা সে চিন্তা করা দরকার আমাদের। যে বিপুল জনগোষ্ঠি উপকূল জুড়ে কঠিন পরিশ্রম করে টিকে আছে তাদের শক্তির মূল্য আমরা কোনোদিন করিনি। শুধু বড় ধরনের দুর্যোগে তাদের সাময়িক অসহায়ত্বকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরে আমরা ভিা অনুদানের পশরা সাজাই। আসন্ন দুর্যোগে এই মানুষদের কি করে তৈরী করা যায় এখন থেকেই তা ভাবনায় আনতে হবে। যে দুর্যোগ ধেয়ে আসছে বলে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি তা কিন্তু হঠাৎ একদিন ধেয়ে আসবেনা। ধীরে ধীরে তা প্রকট হবে। আগামী পঞ্চাশ বছর সময় হয়তো আমরা হাতে পাব। এ সময় একটি জনগোষ্ঠিকে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সময়। ধনী দেশগুলোর সাথে দেন দরবার আর দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের বিকল্প পথ বের করতে হবে এক সাথেই। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ।
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজগবেষক, গণমাধ্যম কর্মী